চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। কিন্তু দেশটি গেল কয়েক মাস ধরে হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের মতো পণ্য মজুত করছে। গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পণ্য মজুত করায় তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কেন জ্বালানি তেল ও স্বর্ণ মজুত করছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। এমনকি জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জোরেশোরে কাজ চালাচ্ছে চীন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞার যে খেলা খেলেছে, সেই বই সম্ভবত খুব ভালোভাবেই পড়েছেন জিনপিং। আর তাই চীনের অর্থনীতিকে একই ধরনের চাপ থেকে মুক্ত রাখতে সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। বিদেশ নীতি বিশ্লেষণ বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার অন দ্য রকস-এ এক নিবন্ধে এমনটাই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব নেভাল ইন্টিলিজেন্সের সাবেক প্রধান মাইকেল স্টাডম্যান।
তাইওয়ানকে নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দাবি করে আসছে চীন। তবে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি কখনও তাইওয়ানে শাসন করেনি। মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, ২০২৭ সালে দ্বীপটিতে হামলা চালাতে পারে চীন। যদিও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে বিভেদ রয়েছে। কারও কারও মতে, আসলে চীন এমন কিছুই করবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন যে হারে স্বর্ণ মজুত করছে, তা নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে পশ্চিমাদের মধ্যে।
গেল এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৮ মাস ধরে পিপলস ব্যাংক অব চায়না স্বর্ণের মজুত বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেনগুই নিউজউইককে বলেন, চীনের বৈচিত্র্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক রিজার্ভের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে স্বর্ণ মজুত। যুদ্ধের কারণেই চীন স্বর্ণ মজুত করছে কিনা, নিউজউইকের এমন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পেনগুই। তার ভাষায়, দীর্ঘ মেয়াদি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই স্বর্ণ মজুত করে যাচ্ছে চীন। তবে বেইজিংয়ের স্বর্ণ মজুতের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি তাইওয়ান।
স্বর্ণ মজুতের পাশাপাশি ব্যাপক হারে জ্বালানি তেল কিনছে চীন। এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে থাকে বেইজিং। তবে গেল বছর প্রতিদিন রেকর্ড ১ কোটি ১৩ লাখ ব্যারেল করে তেল কিনেছে জিনপিংয়ের সরকার। যদিও তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্য একটি কারণ রয়েছে। করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে চীনে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। তাতে চাহিদাও বেড়েছে ১০ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু স্বর্ণ বা জ্বালানি তেলই নয় সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখে আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। স্টাডম্যানের ভাষায়, চীন সম্ভাব্য খাদ্য ও জ্বালানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমানোর জন্য কাজ করছে। পাশাপাশি নিজেদের কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুত বাড়াচ্ছে এবং নতুন উদ্দীপনা নিয়ে কয়লা-চালিত প্ল্যান্ট নির্মাণ করছে। তাইওয়ানে হামলা চালালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণেই জিনপিং এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বিশ্বাস স্টাডম্যানের।
মন্তব্য করুন