ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে পুরো ইউরোপকে একটি শিক্ষা দিতে চাইছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাইছেন রাশিয়ার সামান্যতম নিরাপত্তা হুমকিও বরদাশত করবে না মস্কো। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তারে আফ্রিকার দিকে নজর দিতে শুরু করেছে পরমাণু শক্তিধর দেশটি।
সম্প্রতি আফ্রিকার সাব-সাহারার সাহেল অঞ্চলে রুশ কূটনীতিকদের ঝটিকা সফর তারই ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু হঠাৎ করেই আফ্রিকার প্রতি রাশিয়ার এমন আগ্রহের কারণ কী?
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিকভাবে অস্তির মহাদেশ আফ্রিকায় থাকা খনিজ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে রাশিয়া। এ লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহে সাহেল অঞ্চলের একাধিক দেশে বিভিন্ন আর্থিক সাহায্য ও সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রুশ কূটনীতিকরা।
সম্প্রতি সাহেল অঞ্চলের দেশগুলো তাদের চিরাচরিত মিত্র ও নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
ফলে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে তা পূরণ করতে ঝুঁকে পড়েছে রাশিয়ার দিকে। ক্রমেই এমন দেশের সংখ্যাও বাড়ছে অঞ্চলটিতে।
এমন পরিস্থিতিকে সামনে রেখে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেেই লাভরভ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার আফ্রিকা সফরে গিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তিনি গিনি, রিপাবলিক অব কঙ্গো, বুরকিনা ফাসো ও চাদে যান।
এদিকে বেসরকারি সেনাদল ওয়াগনারসহ রুশ সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কোর-কে ব্যবহার করে মস্কো আগ্রাসীভাবে আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সামরিক সহযোগিতা প্রসারিত করেছে।
রুশ ভাড়াটেরা আফ্রিকান নেতাদের রক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রগুলোকে চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করছে। পোলিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এই মাসে এক সমীক্ষায় বলেছে, ‘আফ্রিকা কোর ’ তৈরির মাধ্যমে রাশিয়া আফ্রিকাতে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে।
আফ্রিকা দেশগুলো খনিজসম্পদ, তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও সেখানে রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ তাদের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্রমশই মূল বিষয় হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই মস্কো তাদের নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলির মাধ্যমে সেখানে খনিজ-চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে স্বর্ণ ও হীরা, কঙ্গোতে কোবাল্ট, সুদানে স্বর্ণ ও তেল, মাদাগাস্কারে ক্রোমাইট, জিম্বাবুয়েতে প্লাটিনাম ও হীরা এবং নামিবিয়ায় ইউরেনিয়াম খনির দখল নিয়েছে রাশিয়া।
মন্তব্য করুন