আট ফুট উচ্চতার একটি ডেগে তেল, মসলা ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে রান্না করা হচ্ছে হালিম। সেই হালিম দিয়ে ইফতার করবেন ৫০ হাজার মানুষ। বিশ্বজুড়ে পবিত্র এ রমজান মাসে নানা পদের খাবার দিয়ে মুসলিমরা ইফতার করে থাকেন। কিন্তু জোহানেসবার্গের এই মানুষদের জন্য বিশাল ডেগে রান্না সেই হালিমই ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই ক্লান্তিহীনভাবে হালিম বানিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
বিশালাকৃতির এ ডেগে ৭ হাজার ৮০০ লিটার পর্যন্ত হালিম তৈরি করা যায়। সেই হালিম দিয়ে ইফতার করবেন পারবেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ। ঠিক সে কথাই বলছিলেন একজন স্বেচ্ছাসেবী। তার ভাষায়, মানবতার খাতিরে গরিব ও দুস্থদের জন্য আমরা এ আয়োজন করেছি। এ কমিউনিটির অনেকের জন্যই পবিত্র রমজান মাসে এ হালিমই লাইফলাইন।
সংবাদমাধ্যম ভায়োরির প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ইমাম আহমেদ রাজা জামে মসজিদে স্বেচ্ছাসেবীরা এভাবেই তৈরি করছেন হালিম। মসজিদের রসুইঘরে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের মসলা অনেকগুলো বলে রাখা রয়েছে। আলাদা আলাদা পাতিলে রান্না করা হচ্ছে ডাল। এরপর সেগুলো বড় ডেগে ঢেলে দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো হচ্ছে হালিম।
নির্দিষ্ট পরিমাণে নানা ধরনের মসলা, মুরগি, পেঁয়াজ মেপে রাখা হয় আগে। সেগুলোই পরে প্রায় সোয়া ৮ ফুটের এই ডেগে ঢেলে দেওয়া হয়। বেনোনির একটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান এই ডেগের ডিজাইন করেছে এবং তারাই এটি তৈরি করেছে। পুরোটা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এ ডেগের তলা ৬ মিলিমিটার পুরু। আর চারপাশের দেয়াল ৩ মিলিমিটার পুরু।
আরেকজন স্বেচ্ছাসেবী বলছিলেন, তারা লেনাসিয়া দক্ষিণের চিশতি সারেবিতে এসেছেন। এখানে এই ডেগকে আশার পাত্র বলা হয়। কয়েক হাজার মানুষ এখানে খাবার খাবেন। এই ডেগটি আফ্রিকার সবচেয়ে বড় পাত্র। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য এই ডেগেই খাবার রান্না করা হয়। হালিমের রেসিপি একটি ঐতিহ্যের অংশ। বংশপরম্পরায় এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে রেখেছেন কেউ কেউ।
তাদেরই একজন এই নারী স্বেচ্ছাসেবী। তিনি নিজের শাশুড়ির কাছ থেকে এই রেসিপি পেয়েছিলেন। তাই তার শাশুড়ি যে যে মসলা, যেভাবে ব্যবহার করতেন, তিনিও এখন সেটি অনুসরণ করছেন। প্রতি বছর রমজানে ঠিক একই রেসিপিতে হালিম রান্না করেন এই নারী স্বেচ্ছাসেবী। এত বিশাল আয়োজনের জন্য অনেকটা সময় লেগে যায়। তাই অনেক ক্ষেত্রে ঘুমও বাদ দিতে হয়।
হেড শেফ মোহাম্মদ আমিনের ভাষায়, গত রাতে আমরা ঘুমাইনি। আমরা রাতভর জেগে হালিম তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছিল। সবকিছু সিদ্ধ করেছি। রমজান মাসে আল্লাহ তায়লার সন্তুষ্টির জন্য আমরা এটা করেছি। তবে এত মানুষের জন্য খাবার জোগাড় করতে গিয়ে নানা চাপে পড়েন আয়োজকরা। বিশেষ করে টাকা-পয়সার সংকট বেশি ভোগায় তাদের।
মন্তব্য করুন