চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনের এ মাঠে লড়বেন গতবারের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডেমোক্রেটিক দলের জো বাইডেন এবং রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের পাশাপাশি পুরো বিশ্বই গভীর মনোযোগে তাকিয়ে আছে নভেম্বরের ঘোষিত নির্বাচনের দিকে।
বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাশালী দেশটির মসনদে কে বসতে যাচ্ছে সেটাতে আগ্রহ সবার। কারণ, দেশটির পররাষ্ট্রনীতি এবং হোয়াইট হাউস থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত নানাভাবে প্রভাব ফেলে বিশ্বের নানা প্রান্তে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বন্ধু দেশগুলোর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর আগ্রহই যেন একটু বেশিই। বাইডেন না কি ট্রাম্প সেই প্রশ্নে পরাশক্তি দেশগুলো কী ভাবছে তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। বিশেষ করে রাশিয়া, চীন, ভারতের মতো দেশগুলো কী ভাবছে তা তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
কাকে হোয়াইট হাউসে দেখতে চাইবেন পুতিন? পুতিন বলেছেন, তিনি আসলে জো বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে দেখতে চান। কারণ, বাইডেনকে অনেক বেশি ‘অনুমান’ করা যায়। তবে প্রকাশ্যে পুতিন এ কথা বললেও এটাকে প্রকৃত সত্য ভেবে নেওয়ার ঠিক হবে না।
জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘খুনি’ হিসেবে অবিহিত করেছেন এবং মস্কোর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমালোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনে হামলাকে রাশিয়ার নিজস্ব বিষয় বলেছেন।
অবশ্য বাইডেন বা ট্রাম্প, কাউকেই আপন ভাবতে পারবে না মস্কো। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ক্রেমলিনকে রীতিমতো হতাশ করেছেন। তাই মস্কো খুব সম্ভবত এই নির্বাচনকে ন্যাটো-দর্শন, ইউক্রেন-দর্শন এবং একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখছে। যা তাদের ভূরাজনৈতিক কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শি জিনপিং কাকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট দেখতে চাইবেন? বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়েই বিশ্ববাণিজ্যে চীনের বাড়তে থাকা প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রায় একই নীতিতে চলেন। কিন্তু চীনের আঞ্চলিক প্রভাবের বিরুদ্ধে দুই প্রার্থীর মনোভাব সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বাইডেন একাধিকবার বলেছেন, যদি চীন স্বাধীনতা ঘোষণা করা তাইওয়ানকে তাদের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আবার যুক্ত করার চেষ্টা করে, তবে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী তিনি দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবেন। অন্যদিকে ট্রাম্প হয়তো এখানে ভিন্ন চিন্তা পোষণ করেন।
চীনের জন্য অবশ্য উভয় প্রার্থীই অপছন্দের। বেইজিংয়ের চোখে চঞ্চলমতি ট্রাম্প ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে তাদের দুর্বল করে দিতে পারেন। তবে, তার আমলে একইসঙ্গে চীনের সঙ্গে আবারও বাণিজ্য-লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কাও করে চীন।
বাইডেন আরও চার বছরের জন্য ক্ষমতায় ফেরেন, বেইজিং সম্ভবত এটাও চায় না। তাদের বিশ্বাস, বাইডেন যেভাবে জোট গঠন করে চলেছেন, তাতে নতুন আরেকটি স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
ভারত কাকে চাইবে? চীনের বিরুদ্ধে ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বড় মিত্র ভারত। একই সঙ্গে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় কে আসবেন সেটা নিয়ে ভারত খুব একটা ভাবছে না। ট্রাম্প বা বাইডেন যেই প্রেসিডেন্ট হোক ভারত তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধু-সম্পর্ক নিয়েই চলবে।
মন্তব্য করুন