দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর মহাকাশ জয়ের দারপ্রান্তে বোয়িংয়ের তৈরি প্রথম স্টারলাইনার মহাকাশযান। শনিবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) উদ্দেশে যাত্রা করার কথা ছিল এই স্পেস ক্যাপসুলের। কিন্তু রওনার ঠিক ৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ড আগে থমকে দেওয়া হয় সেই যাত্রাকে। আর এর মাধ্যমে স্টারলাইনারের আকাশছোয়ার অপেক্ষা আরও একটু দীর্ঘ হলো।
স্টারলাইনারের এই মহাকাশযাত্রায় সঙ্গী হওয়ার কথা ছিল নাসার দুই নভোচারির। ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাসার নভোচারি সুনীতা উইলিয়ামস ও ব্যারি 'বুচ' উইলমোর এর আগেও একাধিকবার মহাকাশভ্রমণ করেছেন। তাদের এবারের মিশন সফল হলে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পর মহাকাশ পরিবহনে দ্বিতীয় বেসরকারি সংস্থা হিসেবে পরিচিতি পাবে বোয়িং।
নাসার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাত্রার ঠিক ৯০ মিনিট আগে তারা স্টারলাইনারে ত্রুটি দেখতে পান। মহাকাশযানের অক্সিজেন রিলিফ ভালভ, যার মাধ্যমে বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাতে সমস্যা দেখা দেয়। উড্ডয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল মহাকাশযানটি। বিপত্তি দেখা দেওয়ায় সুনীতা এবং ব্যারিকে নিরাপদে বের করে আনা হয় মহাকাশযান থেকে।
জানা গেছে, নাসা ও বোয়েংয়ের এই যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে স্টারলাইনার স্পেস ক্যাপসুলটি। এই স্পেস ক্যাপসুল উৎক্ষেপণের জন্য শনিবারকে বেছে নিয়েছিল তারা। গন্তব্য ছিল আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন। যদিও এই উৎক্ষেপণে তড়িঘড়ি করা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত ছিল নাসার। তাদের দাবি ছিল, সমগ্র বিষয়টিকে আরও বুঝে নিয়ে তারপরেই উড্ডয়ন করা প্রয়োজন। স্পেস ক্যাপসুলটি আগামী ৫-৬ জুন তারিখ নাগাদ উড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মহাকাশে যাওয়ার কথা ছিল স্টারলাইনারের। পরে ২০১৯ সালে মহাকাশযানটিকে আবার প্রস্তুত করা হলেও সফটওয়্যার ত্রুটির কারণে যাত্রা পিছিয়ে যায়। এরপর ২০২১ সালের আগস্ট এবং ২০২২ সালের মে মাসে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তা সফল হয়নি।
রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল হওয়ায় নিজেরা মহাকাশযান তৈরির বদলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মহাকাশযান ব্যবহার করতে বেশি আগ্রহী নাসা। আর তাই এক দশক আগে নাসা বেসরকারি মহাকাশযান ব্যবহারের ঘোষণা দেয়। তখন স্পেসএক্স ও বোয়িং নাসার সঙ্গে কাজ শুরু করে। মহাকাশযান তৈরির জন্য স্পেসএক্সের সঙ্গে ২৬০ কোটি ও বোয়িংয়ের সঙ্গে ৪২০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তিও করে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। চুক্তির শর্ত মেনে ২০২০ সালে প্রথম মহাকাশে যাত্রা করে স্পেসএক্সের মহাকাশযান।
স্টারলাইনার মহাকাশযান লম্বায় ৫ মিটার ও চওড়ায় ৪ দশমিক ৬ মিটার। অ্যাপোলো মিশনে ব্যবহৃত ক্যাপসুলের চেয়ে বেশ চওড়া মহাকাশযানটিতে সর্বোচ্চ সাতজন আরোহী বসতে পারেন। এবারের মহাকাশ অভিযানে মূলত মহাকাশচারীদের নতুন পোশাকের (স্পেস স্যুট) কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে। নাসার নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়াম স্টারলাইনারের প্রথম যাত্রী হিসেবে মহাকাশে ভ্রমণ করবেন। দুজনই নৌ-বৈমানিক ও সাবেক আইএসএস কমান্ডার।
নাসার তথ্যমতে, মহাকাশচারীদের নতুন পোশাকটি আগের তুলনায় প্রায় ৪০ ভাগ হালকা ও নমনীয়। পোশাকটির সঙ্গে স্পর্শনির্ভর ও সংবেদনশীল গ্লাভস থাকায় মহাকাশচারীরা সহজেই ট্যাবলেট কম্পিউটারের মতো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন।
স্টারলাইনার প্রায় ১০ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। মার্কিন মহাকাশ পরামর্শদাতা সংস্থা কুইল্টির পরামর্শক কালেব হেনরি বলেন, স্টারলাইনার উৎক্ষেপণ মহাকাশযানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বেসরকারি খাতে নতুন মহাকাশযান হিসেবে স্টারলাইনার ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখন গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে।
মন্তব্য করুন