ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। বিবৃতিতে তিনি, নতুন এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক এবং আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (১৮ নভেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য ইরানের বিরুদ্ধে নতুন এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ পদক্ষেপের মূল কারণ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার প্রতি ইরানের সমর্থন, বিশেষ করে সামরিক সহায়তার কারণে এসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ইইউ ব্রাসেলসে সোমবার এক ঘোষণায় জানায়, তারা ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান শিপিং লাইনস (আইআরআইএসএল) এবং এর পরিচালককে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্রিটেনও একই দিন ইরানের এয়ারলাইনস এবং শিপিং ক্যারিয়ারগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাদের অভিযোগ রাশিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের জন্য ইরান দায়ী।
ইরান এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দাবি করেছে, এসব পদক্ষেপের কোনো সঠিক ভিত্তি নেই। ইসমাইল বাঘাই তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বক্তব্যে বলেন, ‘ইইউ এবং ব্রিটেনের নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক। ইরান এই পদক্ষেপগুলো প্রত্যাখ্যান করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তামাশা এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের প্রতি হস্তক্ষেপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাগুলোর মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের নৌপরিবহন এবং সামুদ্রিক বাণিজ্যের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছে। যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন এবং ন্যায্য বাণিজ্যিক নীতির বিরুদ্ধে একটি সরাসরি আক্রমণ।’
উল্লেখ্য, ইরান এবং রাশিয়ার মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ২০২২ সালের পর আরও দৃঢ় হয়েছে। বিশেষ করে, ইরান রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে, যার মধ্যে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এই সম্পর্ককে সমালোচনা করে আসছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তারা কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে অংশ নেয় না এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানায়। তেহরান মনে করে, এসব নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আরোপ করা হয়েছে এবং এগুলো ইরানের আঞ্চলিক ভূমিকা ও সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। ইরানের দাবি, এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার কোনো কার্যকর সমাধান নয়।
ইরান-ইউরোপ সম্পর্কের এই নতুন পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞাগুলোর সম্ভাব্য প্রভাব বিশাল হতে পারে, বিশেষ করে বাণিজ্য ও নৌপরিবহন খাতে। ইরান মনে করে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর ফলে বিশ্বের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
মন্তব্য করুন