আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে গাজায় গণহত্যায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব পাস করেছে, যা দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নীতি থেকে একধাপ এগিয়ে গিয়ে স্বাধীনভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ইঙ্গিত দেয়।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) পাস হওয়া এ প্রস্তাবের মাধ্যমে আইরিশ আইনপ্রণেতারা ইসরায়েলকে ‘অপরাধমূলক শাসনব্যবস্থা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়ে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খবর পার্সটুডে।
নিষেধাজ্ঞার আরোপের প্রস্তাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র লেনদেন স্থগিত করার পাশাপাশি, তেল আবিবে অস্ত্রবাহী বিমানের চলাচল বন্ধ করার এবং আয়ারল্যান্ডের আকাশসীমা ও বিমানবন্দর ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। অন্যদিকে গণহত্যারও অভিযোগ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে যখন গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলছে।
এদিকে আয়ারল্যান্ডের এ পদক্ষেপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতির বিপরীতে হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলকে তার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ধরে রেখেছে। যার বাণিজ্যের পরিমাণ গত বছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক সদস্য দেশই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে রাজি হয়নি। এ প্রেক্ষিতে, আয়ারল্যান্ড একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য একটি স্বাধীন অবস্থান নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাড়া ফেলতে পারে।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, যে তার দেশ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগের মামলায় সহযোগিতা প্রদান করবে। তিনি বলেন, আমরা একটি ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত।
আয়ারল্যান্ডের এ পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাধারণ নীতির বিপরীতে সংঘটিত হয়েছে, কারণ ইইউ ইসরায়েলকে তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ধরে রেখেছে। তবে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস জানিয়েছেন, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তা প্রত্যাশা করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়ারল্যান্ড পশ্চিমতীরে ইহুদিবাদী বসতিগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, যার বাজারমূল্য প্রায় এক মিলিয়ন ইউরো প্রতি বছর।
আয়ারল্যান্ডের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিচ্ছিন্ন করতে সহায়ক হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ইউরোপে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপের পথ খুলে দিতে পারে।
মন্তব্য করুন