ফিলিস্তিনের গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা গণহত্যা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচারের অভিযোগ করেছেন সংবাদমাধ্যমটির শতাধিক কর্মী। তারা অভিযোগ করেছেন, বিবিসি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে এবং ‘যথাযথ তথ্যপ্রমাণভিত্তিক সাংবাদিকতা’র অভাব রয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার (১ অক্টোবর) বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও সিইও ডেবোরা টার্নেসকে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হয়। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা দাবি করেন, ‘ইসরায়েলকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে বিবিসির মৌলিক সাংবাদিকতা নীতির অভাব রয়েছে।’
এতে শতাধিক বিবিসি কর্মী এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের ২০০ এরও বেশি কর্মী, ইতিহাসবিদ, অভিনেতা, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ স্বাক্ষর করেছেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রতিটি টেলিভিশন প্রতিবেদন, নিবন্ধ ও রেডিও সাক্ষাৎকার ইসরায়েলের দাবিকে শক্তভাবে চ্যালেঞ্জ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এগুলো পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিনিদের অমানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।’
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ হাজার ৩১৪ জন নিহত ও ১ লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। স্বাক্ষরকারীরা বিবিসিকে সম্পাদকীয় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলের গাজায় বহিরাগত সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয় না।’ চিঠিতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পূর্ববর্তী নিয়মিত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ প্রতিটি সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি সরকার ও সামরিক প্রতিনিধিদের দৃঢ়ভাবে চ্যালেঞ্জ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ব্রিটিশ গণমাধ্যম সংস্থা যেমন- বিবিসি, আইটিভি ও স্কাই নিউজের প্রতি মানুষের ‘উচ্চস্তরের’ আস্থা রয়েছে। সুতরাং, তাদের দায়িত্ব রয়েছে নির্ভয়ে প্রমাণসহ তথ্য উপস্থাপন করা।’ গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসির পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ তাদের নিজস্ব সম্পাদকীয় মান, নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতাকে গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
চিঠির উত্তরে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘যখন আমরা ভুল করি বা প্রতিবেদন করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন করি, তখন আমরা পরিষ্কার করে দিই।’
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদনে যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা নিয়েও আমরা আমাদের শ্রোতাদের কাছে স্পষ্টভাবে বলে দিই। গাজায় প্রবেশাধিকার বন্ধ এবং লেবাননের কিছু অংশে সীমিত প্রবেশাধিকারসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তথ্য সংগ্রহে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকে।’
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর বিবিসির নিযুক্ত আট ব্রিটিশ সাংবাদিক আল জাজিরাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে তারা বলেন, বিবিসি ‘গাজা যুদ্ধের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে দ্বিচারিতা’র দোষে দোষী।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ মুসলিমরা মনে করেন গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির অবস্থান যথেষ্ট নয়। তাদের ভাষ্য, পূর্বের কনজারভেটিভ সরকারের চেয়ে লেবার পার্টি গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ নিয়ে কিছুটা সোচ্চার হলেও তা মুসলিম ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। নির্বাচনের আগে দলটির ইশতেহারে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইসরায়েলের কাছে ৩০টি অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত করে ব্রিটেন। তার আগে গত ফেব্রুয়ারিতে তীব্র চাপের পর একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় লেবার পার্টি।
মন্তব্য করুন