সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে বৃহত্তর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণাটি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি লেখক আভি লিপকিনের একটি সাক্ষাৎকার ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, ভবিষ্যতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের সীমানা লেবানন থেকে সৌদি আরবের বিশাল মরুভূমি, ভূমধ্যসাগর থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণা একটি প্রাচীন বিশ্বাসের অংশ। থিওডোর হার্জল, যিনি আধুনিক ইহুদীবাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত, তার সময় থেকেই এ ধারণা প্রচলিত। তিনি বলেছিলেন, এ অঞ্চলগুলোতে ইহুদিদের অধিকার রয়েছে, যা মিসরের নীল নদ থেকে শুরু করে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।
এদিকে এখনকার ইসরায়েলি রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ ধারণা সমর্থনকারী অনেকেই রয়েছেন। উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক নেতাদের মতে, ইসরায়েলের পবিত্র ভূমি কেবল বর্তমান সীমানা নয়, বরং আরও বিস্তৃত এলাকা।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে গাজায় হামলার পর এবং ইসরায়েলের লেবাননে চলমান অভিযানগুলো এ ধারণাটিকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের ইউনিফর্মে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ মানচিত্রযুক্ত ব্যাজ পরেছিল। এ ঘটনায় আরব দেশগুলোতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এ ধারণার মানচিত্রে জর্ডান, সিরিয়া এবং অন্যান্য আরব অঞ্চলের অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাকি নুসরাত বলেন, ‘বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণাটি ইসরায়েলি সমাজে গভীরভাবে গেঁথে আছে।’ কিন্তু, যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ওমার করিম এ ধারণাটিকে শুধু একটি কল্পনা হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে পশ্চিমা দেশের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ নিয়ে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন, পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে খুব একটা কঠোর অবস্থান নেয়নি। চলতি বছরই, যখন ইসরায়েল কিছু নতুন বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয়, তখন বাইডেন প্রশাসন তাদের খুব সূক্ষ্মভাবে নিন্দা জানায়। তাকি নুসরাতের মতে, এ ধরনের দুর্বল প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলকে বৃহত্তর ইসরায়েলের স্বপ্নপূরণে উৎসাহিত করছে।
বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য এক বড় প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন সময়ের মধ্যে, ইসরায়েলের কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতিক্রিয়া এ ধারণার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নির্ধারণ করবে। বিশ্ববাসী তাকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের এ জটিল পরিস্থিতি আগামীদিনে কীভাবে পরিবর্তিত হবে।
মন্তব্য করুন