ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল কেবল ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলা চালাবে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পারমাণবিক বা তেলসংক্রান্ত কোনো স্থাপনায় হামলা করবে না ইসরায়েল এ বিষয়ে ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন দুই কর্মকর্তাকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) প্রায় দুই মাস পর ফোনে কথা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, এ ফোন আলাপেই নেতানিয়াহু জানান, ইরানের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছেন তিনি।
তবে, পারমাণবিক স্থাপনা ও তেল পরিশোধনাগারগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা হোয়াইট হাউস থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে মঙ্গলবার সকালে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে, তবে তারা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের দিকে ইরান ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এ হামলার পর নেতানিয়াহু কঠোর প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেন, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর ‘মধ্যম মাত্রার’ হামলায় রাজি হওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুই কর্মকর্তা আরও জানান, মূলত এ কারণে নেতানিয়াহু ‘মধ্যম মাত্রার’ হামলায় রাজি হয়েছেন। শুরুতে তিনি পারমাণবিক স্থাপনা ও তেল পরিশোধনাগারে হামলার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেছিলেন।
এদিকে নেতানিয়াহু নমনীয় হওয়ার কারণেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে একটি শক্তিশালী আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (থাড) এবং এর পরিচালনার জন্য ১০০ মার্কিন সেনা পাঠাতে রাজি হয়েছেন। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, ১ অক্টোবর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বাইডেন প্রকাশ্যে জানান তিনি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট কোনো স্থাপনার ওপর ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করেন না।
এদিকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য সংঘাতের বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলো উদ্বেগে রয়েছে। ইসরায়েলি পাল্টা হামলা যে কোনো সময় বিস্তৃত সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন