সাম্প্রতিক বিশ্ব যেন পরিণত হয়েছে এক অনন্য যুদ্ধক্ষেত্রে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই শুরু হয়েছে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা। সেইসঙ্গে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা, সব মিলে পুরো অস্থির এক বিশ্ব দেখছে মানব সভ্যতা। এরকম এক অবস্থায় বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলো যেখানে বিশ্ব শান্তি আনতে ব্যর্থ, সেখানে অনেকটা একাই যেন সেই চেষ্টাকে এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের মহাসচিব বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন সব যুদ্ধ যেন বন্ধ করা হয়। এমনকি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন বৈশ্বিক সংস্থা জাতিসংঘের সংস্কার আনারও। কিন্তু তার কথায় কান দিচ্ছে না কেউ-ই। বরং শান্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় চক্ষুশূল হতে হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের। অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয়েছে তাকে। কিন্তু তার অবদানকে ভুলে যাচ্ছে না নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
চলতি ২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে মনোনীত করেছে নরওয়ের নোবেল পুরস্কার প্রদান কমিটি। জাতিসংঘ মহাসচিবের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিবেদিত জাতিসংঘের সংস্থা দ্য ইউনাইটেড নেশন্স প্যালেস্টাইনিয়ান রিফিউজি এজেন্সি এবং জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ড অব জাস্টিসকেও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
নরওয়ের থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উরদাল রয়টার্সকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। তারা দেখতে পাচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার তৃতীয় বছরে পা রাখতে চলেছে; সুদানে দেড় বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হামাস একে অন্যকে ধ্বংসের লক্ষ্যে এক বছর ধরে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছে। এই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে সহিংসতা এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য যারা বা যেসব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, নোবেল কমিটি এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদেরই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারবিষয়ক ইতিহাসবিদ অ্যাশলে সেভিনের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীজুড়ে যে বৈশ্বিক আইনের শাসন চালু হয়েছিল, তা গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই বৈশ্বিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রাখছেন, তাদেরই এবারের শান্তি পুরস্কারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিচ্ছে নরওয়ের নোবেল কমিটি। সেই হিসেবে পুরস্কারের জন্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতিসংঘের মহাসচিব এবং আইসিজের মধ্যে।
মন্তব্য করুন