মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেছেন, সরকারের একার পক্ষে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব নয়। একজন মেয়ে হলো একটি দেশের জাতীয় সম্পদ। মেয়ের পেছনে বিনিয়োগ করলে পরিবার ফেরত পাবে। আর মেয়েটি বাল্যবিয়ের শিকার হলে জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হবে।
বুধবার (৫ জুন) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু ইন্ড চাইল্ড ম্যারেজ (জিপিইসিএম)-এর তৃতীয় পর্যায় উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারক। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ( গ্রেড-১) কেয়া খান, বাংলাদেশ ইউএনেফপিএ’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লখুস, বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গুয়্যাভুয়া। নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন কিশোরী সানজিদা ইসলাম, মো. জায়েদ আমিন। তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ সীমাবদ্ধ, বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা পরস্পরের সহযোগিতা ও রিসোর্স শেয়ারিং এর মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ ও আরও গতিশীল করতে পারব। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা অন্যান্য দেশের কার্যক্রম এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তাদের কার্যকরী উদ্যোগ ও ইনোভেশন সম্পর্কে জানতে পারছি। একই সাথে সেটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু কার্যকর তা পরীক্ষা করার সুযোগও পাচ্ছি।
শিশুবিবাহ নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও শিশুবিবাহ নিরোধ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতে ঘনিষ্ঠ ও কার্যকরভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু আইনের মাধ্যমে শিশুবিবাহ নিরসন করা যাবে না। সে কারণে এ বিষয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তনে কাজ করার ওপরেও আমরা গুরুত্ব দেব।
বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনি নীতিমালা আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশজুড়ে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা হবে। এর লক্ষ্য হবে বাল্যবিবাহ নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দক্ষতা (রিসোর্স) বৃদ্ধি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা প্রদান। কর্মসূচির নতুন এই ধাপে শিশুবিবাহবিরোধী আইন ও নীতিমালা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষার স্কিমগুলো আরও কার্যকর করা ও কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনে গুরুত্ব দেওয়া।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ ১৮ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুদের বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রচেষ্টায় সরকারকে সহায়তার জন্য গ্লোবাল প্রোগ্রামে শিশুবিবাহ নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার পুরো মাত্রায় বাস্তবায়ন নিশ্চিতের জন্য কাজ করা হবে। সে লক্ষ্যে অনেক খাতের সম্মিলন ঘটিয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম এবং তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ক্রিস্টিন ব্লখুস বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ হারে শিশুবিবাহ কমছে। এর অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরসনের জন্য দুই শতকের বেশি সময়- ২১৫ বছর লেগে যাবে।
তিনি বলেন, কন্যাশিশুদের স্কুলে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারলে তা বেশ কাজে দেবে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় বর্ধিত ও সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং কম্প্রিহেন্সিভ সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন কিশোরীদের তাদের শরীর ও জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তুলবে, যা তাদের পরিবর্তনের দূত ও ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দেবে। স্ট্যানলি গুয়্যাভুয়া বলেন, যেসব জেলায় উচ্চ মাত্রায় শিশুবিবাহ রয়েছে, সেসব জায়গায় আমরা অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে শিশুবিবাহের মূল কারণ মোকাবিলার পাশাপাশি এক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এমন সবাইকে যুক্ত করব। সেই সঙ্গে আমরা বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরী কন্যাশিশুদের সমন্বিত সহায়তা প্রদান করব। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ জেলায় বাল্যবিয়ের হার ৬২ থেকে ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে বাগেরহাট জেলায় বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি।
নাজমা মোবারক বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধ করার ক্ষেত্রে ২৩টি মন্ত্রণালয়কে চিহ্নিত করেছি। ১০টি জেলা নয়, পুরো দেশে বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করতে হবে।
কেয়া খান বলেন, ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রতিটি স্কুলে কিশোর-কিশোরী, অভিভাবক, শিক্ষকদের নিয়ে সচেতনতা সভা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন