প্রাক-জাতীয় বাজেট ব্রিফিংয়ে শিশুকল্যাণের মূল খাতসমূহে বরাদ্দ বাড়ানো, এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণে জোর দেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় মোট বাজেটের আকার ১২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য বরাদ্দ আনুপাতিক হারে হ্রাস পেয়েছে। যা শিশুদের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।
ইউনিসেফ ও ‘বাংলাদেশ জেনারেশন পারলামেন্ট (জেনপি)’ উদ্যোগে শিশুরা জাতীয় সংসদে এ তথ্যগুলো তুলে ধরে।
সোমবার (০৩ জুন) ইউনিসেফ পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটস-এর সঙ্গে যৌথভাবে “জাতীয় বাজেটে শিশুদের স্বার্থ রক্ষা: প্রাক-বাজেট ব্রিফিং” শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এবং পার্লামেন্টারি ককাস অন চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপার্সন শামসুল হক টুকু, এমপি, বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওয়াইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গ্যুয়েভা প্রমুখ। ইউনিসেফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ ও বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়নে কয়েকটি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের আটটি বিভাগের প্রতিনিধিত্বকারী শিশুরা এই আয়োজনে অংশ নেয়। কুড়িগ্রামের ১১ বছর বয়সী শিশু সাংবাদিক ওয়াইজ আবতী বলে, আমরা বাজেট আলোচনায় আমাদের মতামত, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে বাধাগুলোর সম্মুখীন হই সেগুলো এবং আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য চাহিদাগুলো তুলে ধরতে পারি।
নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, প্রাক-বাজেট বিশ্লেষণে শিশুদের সম্পৃক্ত করার মানে হলো সক্রিয় নাগরিক গড়ে তোলা। এটি জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে তাদের মতামত যাতে শোনা হয় তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।
শিশুদের জন্য সুচিন্তিত বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে স্ট্যানলি গ্যুয়েভা বলেন, “আমাদের শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ করা শুধু একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়– এটি একটি স্মার্ট অর্থনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে অনেক ভালো প্রতিদান পাওয়া যায়। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে শিশুদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া বাজেটের সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
শামসুল হক টুকু বলেন, বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া এবং এর বাস্তবায়নে যাতে দেশের প্রতিটি শিশুর কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিতে আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন থাকে। তা নিশ্চিত করা নীতিনির্ধারক হিসেবে আমাদের কর্তব্য।
বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে, বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা, ওষুধ ও সরঞ্জাম বাড়ানো এবং টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়ন বাড়ানোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আসন্ন জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
শিক্ষা খাতে, বাংলাদেশ লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণসহ প্রায় শতভাগ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে। শিক্ষা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পাঠ্যক্রম সংস্কার, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বিদ্যালয়গুলোকে তাপ প্রতিরোধী করার বিষয়ে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সুরক্ষা খাতে, ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ শিশুদের জীবনের শুরুর বছরগুলোতে তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাংলাদেশ সামাজিক সুরক্ষা খাতে যৌক্তিকভাবে সম্পদ বিনিয়োগ করলেও, যাদের বিশেষ প্রয়োজন তাদের কাছে সেবা ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া ইউনিসেফ তরুণদের মতামতকে তুলে ধরার জন্য ২৮ হাজারের বেশি তরুণের মতামত নিয়ে একটি ‘ইউ-রিপোর্ট’ জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ মনে করে, শিশুদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয় করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগ, শিশুদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে এমন নীতিবিষয়ক সংলাপে তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউনিসেফের যে অঙ্গীকার তারই প্রমাণস্বরূপ।
মন্তব্য করুন