নারীর ক্ষমতায়নে বরাদ্দ করা জেন্ডার বাজেটের কার্যকর বণ্টন, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও বরাদ্দ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ।
সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ : নারীসমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর। সঞ্চালনা করেন পরিচালক শাহনাজ সুমী।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, সরকার জেন্ডারবান্ধব বাজেট করলেও বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পর্যালোচনা বা সমীক্ষা পাওয়া যায় না। পর্যবেক্ষণের অভাবে বাজেটে বরাদ্দের কতটুকু নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো, সে বিষয়েও কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোর জেন্ডার সংবেদনশীল প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেও কম বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়। বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দের পরিকল্পনা ও মনিটরিংয়ের সময় সেই বরাদ্দ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির কর্মকৌশল অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তার কোনো খতিয়ান আমরা দেখতে পাই না। তাই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বরাদ্দকৃত জেন্ডার বাজেটের কার্যক্রমগুলো কীভাবে সরাসরি নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত, তার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রতি বছর তৈরি ও জনসমক্ষে পেশ করতে হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় নারী নীতি ও সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই বাজেট কতদূর অভীষ্ট লক্ষ্যে যেতে পারছে সেটাও দেখার বিষয়। মন্ত্রণালয়গুলোতে যেতে না পারলে মন্ত্রণালয়গুলোর আন্তঃমনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিভাবে তারা সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে।
সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, দেশের ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই নারী। যাদের সিংহভাগই সম্পদহীন, ক্ষমতাহীন, উপার্জনের সুযোগবঞ্চিত ও পরনির্ভরশীল। জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের বিষয়টি জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টনের সঙ্গে যুক্ত। জেন্ডার বাজেট নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে যুক্ত। বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলে কোনো নীতিমালাই নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নেওয়া কৌশলগুলো কতটুকু জেন্ডার চাহিদা পূরণ করছে এবং অগ্রগতি কতটুকু, তার সংখ্যাতাত্ত্বিক ও গুণগত বিশ্লেষণের পরিমাপক নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জেন্ডার ও জেন্ডার বাজেট বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।
বক্তারা বলেন, নারী উন্নয়ন বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন ঘোষণা ও উদ্যোগের কমতি নেই। তবে বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও যে প্রক্রিয়ায় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হচ্ছে কিনা, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই আগামীতে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।
মন্তব্য করুন