নারীর প্রতি বৈষম্য কেবল নারীর ইস্যু নয়, এটি সামাজিক ইস্যু। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নারী সমাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের পথে সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামমাজিক ও পারিবারিক বাধার বিস্তার ঘটেছে।
‘বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করি, সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি’ এই স্লোগানের আলোকে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। ঘোষণা পাঠ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার হোসাইন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শায়লা নাসরিন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সালমা আলী, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মুস্তারি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী মৃদুলা সমদ্দার। কবিতা আবৃত্তি করেন আইটি অফিসার দোলন কৃষ্ণ শীল।
বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নং লক্ষ্যমাত্রা জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নারীকে উন্নয়নের লক্ষ্য হিসেবে দেখার পরিবর্তে উন্নয়নের বাহন হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটাতে হবে।
আলোচনায় আদনান মুস্তারি বলেন, উন্নয়নের ধারায় নতুন চ্যালেঞ্জ হবে জলবায়ু পরিবর্তন। দক্ষিণাঞ্চলের নারীরা স্বাস্থ্যগত ভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে লবণাক্ততার জন্য। পানি সংগ্রহের দায়িত্ব থাকায় কিশোরীদের শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসায় অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
শাহনাজ সুমী বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে নারীর প্রতি থাকা বৈষম্য নানা মাত্রা নিয়ে সামনে হাজির হচ্ছে। বৈষম্য দূর করতে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নারীকে নতুনভাবে নেতৃত্বের কথা বলা হলেও এখানে বৈষম্য আছে। ‘বৈষম্য যে অপরাধ’ এটা নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব না হলে বৈষম্য যাবে না।
অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। প্রয়োগ বলবৎ করতে হলে সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে; নতুন প্রজন্মকে দৃশ্যমান করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তরুণদের নারী আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সমাজে আজ আত্মকেন্দ্রিকতা বেশি হচ্ছে, জলবায়ু সংকট বাড়ছে। এর মধ্যে নারীর জীবনে পরিবর্তন হয়েছে। তারা অধিকার সচেতন হয়েছে। নারীর শক্তিতে বিকশিত করতে নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সঞ্চালনা করেন সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।
মন্তব্য করুন