গ্রামীণ কিংবা শহরের নারীর অনেক বড় একটা সময় চলে যায় জ্বালানি ব্যবস্থাপনায়। তাদের সঠিক জ্ঞানের দক্ষতার অভাবে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েন তারা। এ ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে পারে তাদের জীবন-যাপনের সহজ অনুষঙ্গ। যা তাদের সময়, অর্থ, বাঁচানোর পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে পারে। তাই, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি হতে পারে ক্ষমতায়নের নতুন দিগন্ত।
গত রোববার মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও পাক্ষিক অনন্যার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মশলায় মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) প্রকল্প পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। দেশের প্রথম সারির প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের ১৫ জন নারী সাংবাদিকের অংশগ্রহণে কর্মশালা পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ইউনিট কো-অর্ডিনেটর ওয়াসিউর রহমান তন্ময় প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে আরও হয়, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ও জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার মূল স্রোতধারায় জেন্ডার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রজনগোষ্ঠী নারীর-জীবনযাপন মান উন্নয়নসহ কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে সহায়ক। এই লক্ষ্যে এমজেএফ ‘উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কর্মশালার উদ্দেশ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে জেন্ডার বৈষম্য, জেন্ডার সমতার গুরুত্ব ও নারীরে সফলতার ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে সংবা হিসেবে প্রচারের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা ও উপস্থাপনের কৌশল নির্ধারণ করা।
তাসমিমা হোসেন বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি আমাদের জীবনে কেমন প্রভাব ফেলছে এটা আমরা সবাই উপলদ্ধি করতে পারি। এইক্ষেত্র বিবেচনা করলে ‘নবায়নযোগ্য শক্তি’বা জ্বালানি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের এ বিষয়ে আগ্রহ আছে। আমরা নিজেরা যেমন বিষয়টি জানব এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা প্রচার করব। আমরা গদবাধাভাবে নয় বরং প্রয়োজনের তাগিদে নারীকে এই ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে ভূমিকা রাখতে চাই।
শাহীন আনাম বলেন, আমরা জানি আমাদের নারীরা সেবা কাজে কত পরিশ্রম করে। নারীর পারিশ্রমিকবিহীন কাজ অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়েও আমাদের তাগিদ আছে। পাশপাশি আমরা নারীর গৃহপরিচালনা কাজে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে যুক্ত করে জীবনযাপনে নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে চাই। এ ক্ষেত্রে নারীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ করার জন্য আমরা গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। তাদের সংবাদের মাধ্যমে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি পৌঁছাবে এবং জাতীয় পর্যায়ে সব কর্ম পরিকল্পনায় নারী যুক্ত হবে বলেও আমরা আশা করি।
অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বলেন, নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন এই দোদুল্যমান জায়গা থেকে বের হয়ে আসা দরকার। আমরা উন্নয়নের স্বাদ পাচ্ছি। ক্ষমতায়ন আরও শক্তিশালী একটি জায়গা। এখানে আর কাজ করার রয়েছে।
ওয়াসিউর রহমান তন্ময় বলেন, আমরা কতগুলো পলিসির কথা বলেছি, এই পলিসিগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ ও নারীর কথা নাই বললেই চলে। এই পলিসিগুলোকে আমরা বিশ্লেষণ করেছি। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হওয়ার কথা নারীর। সেক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সেখানে থাকবে না কেনো? এ নিয়ে আমাদের কাজ করার পেছনে বড় যুক্তি রয়েছে।
মন্তব্য করুন