চাঁদপুরের তিনটি ইউনিয়নসহ দেশের কোনো কোনো এলাকায় ফতোয়া দিয়ে নারীর ভোট দেওয়ার অধিকার বন্ধের চেষ্টা চালানোর হচ্ছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ভোট, উত্তারাধিকারের সমান অধিকার থাকবে, অথচ উত্তরাধিকার আইনে তার কোনো প্রতিফলন নেই। নারীর প্রতি বৈষম্যবিলোপ ও সকল নাগরিকের জন্য সমনাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানান বিশিষ্টজনেরা।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের নারীর মানবাধিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ফওজিয়া মোসলেম ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত। সঞ্চালনা করেন বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ সুমী।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবির বলেন, জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশর বেশী নারী, অথচ তাদের বিরুদ্ধে ও অপরাপর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, তাদের প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, যেখানে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। অথচ জাতীয় বাজেটে নারীর জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ দেওয়া হয় না। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আলাদা মন্ত্রণালয় দরকার। আলাদা মন্ত্রণালয় থাকলে নারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করা সহজতর হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ফওজিয়া মোসলেম বলেন, উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারহীনতাই পরিবারে ও সমাজে নারীকে অধস্তন করে রাখে, যা যৌতুক, বাল্যবিয়েসহ নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতার অন্তর্নিহিত মূল কারণ।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমঅধিকার থাকার কথা, সংবিধানের ১৬, ২৭, ২৮ ধারা অনুযায়ী কোনো প্রকার বৈষম্য রাষ্ট্র করবে না। এমনকি যদি কোনো আইনি ধারা কোথাও থাকে সেটিও বাতিল বলে গণ্য হবে। উত্তরাধিকার আইনের ধারাগুলি সংবিধানের ধারাগুলির সাথে সাংঘর্ষিক, এগুলো বাতিল হওয়ার কথা, কিন্তু সেটি হতে দেখি না। নারী সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধরণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে। এটি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার এবং উৎপাদনশীলতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে দেয়, যা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে সহিংসতা প্রতিরোধ করা দরকার। টেকনোলজির যথেচ্ছা ব্যবহার নারীর জীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
মন্তব্য করুন