অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে প্রচারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
চূড়ান্ত নীতিমালাটি রায়ের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) এই রায় দেন বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে রুলের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
রায়ের পর আইনজীবী রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আদালতে দাখিল করেছে, সেটি রায়ের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন আদালত। ফলে সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে নীতিমালাটি এখন বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। এককথায় নীতিমালাটি এখন অবশ্যপালনীয়।’
বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভের বরাত দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন এ রিটটি করা হয় তখন সিজারের মাধ্যমে বাংলাদেশে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৩১ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রার প্রায় তিন গুণ।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে রাশনা ইমাম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সন্তান জন্মদানে বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে ৮৩ শতাংশ, সরকারি হাসপাতালে ৩৫ শতাংশ এবং বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে ৩৯ শতাংশ।’
ব্রাজিল ও চীনে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার ভয়াবহ চিত্র ছিল জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘যথাযথ নীতিমালা, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে দেশ দুটি ‘সি’ সেকশন নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমাদের দেশে বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে সিজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন করে। পরে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্টের উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম। ওই রিটে প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন রোধে একটি নীতিমালা তৈরি করতে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত। স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের এক মাসের মধ্যে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়। আর ওই কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ছয় মাসের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে। আর রুলে জানতে চাওয়া হয়, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বার অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন রোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না। বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর নীতিমালা চূড়ান্ত করে তা আদালতে দাখিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর রুল শুনানি শুরু হয়। চূড়ান্ত শুনানির পর সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
মন্তব্য করুন