সমাজে নারীর অবস্থান কী তা যাচাই করলে দেশের প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হবে। নারীর প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, চিন্তা চেতনায় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব আছে। বামদলগুলো নারী অধিকারে সোচ্চার হলেও ৩৩ শতাংশ নারীর উপস্থিতি দলে নিশ্চিত হয়নি।
এ ছাড়াও নারীর ভোটাধিকারের অভাব, অর্থ ও পেশীশক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের জন্য নারী প্রার্থীদের গুরুত্ব কম দেয়া, ধর্মন্ধতা, নারীকে অবদমন করতে ধর্মের ব্যবহার, মৌলবাদী সংগঠনের ওয়াজের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আলোচনা, দলের মধ্যে থাকা নারীদের ঐক্যবদ্ধ না থাকা, নারী রাজনীতিবিদদের প্রতি তাদের পরিবারের বিদ্বেষমূলক মনোভাব, নারীর স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধা, সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে গুরুত্ব না দিয়ে আর্থিক ও ক্ষমতাবান নারীকে প্রাধান্য দেওয়া, রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আজ শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বামদলীয় জোটের নারী নেতাদের সাথে ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’-বিষয়ক মতবিনিময় সভায় নারী নেতারা এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
আলোচনা সভায় বামদলীয় জোটের নারী নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মুর্শিদা আখতার নাহার, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট জোবাইয়া পারভিন, কেন্দ্রীয় সদস্য শাহানা ফেরদৌস লাকী, সিপিবি এর কেন্দ্রীয় সদস্য লুনা নূর, গণসংহতি আন্দোলনের সদস্য তাসলিমা আখতার, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী। এ ছাড়াও সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ ভালো হলেও নারীর অংশীদারিত্ব কম। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত হতে হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে নারী নেতারা কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় নারী ইস্যু যুক্ত হচ্ছে কিনা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য তিনি রাজনৈতিক দলের নেতাদের আহ্বান জানান।
সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, ধাপে ধাপে নির্বাচনের মাধ্যমে নারীরা রাজনীতিতে আসলেও তারা কতটা কাজ করতে পারছেন এটা দেখতে হবে। একজন নারী ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে নির্বাচন করেন যেখানে পুরুষে ১টি ওয়ার্ডে নির্বাাচন করে। তাদের সুযোগ সুবিধা ও এক নয় যা বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ, রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারীকে দলে রাখার বিধানটি কোনো দলই পূরণ করতে পারেনি।
এ ছাড়াও মুক্তবুদ্ধির মানুষের ওপর আঘাত ও ধর্মান্ধতা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বক্তারা আরও বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি ভঙ্গির পরিহার করতে হবে, কমিটি গঠন করার সময় নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, সব নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হতে হবে; সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক সকল নীতিমালা বা উদ্যোগ বাতিল করতে হবে, সিডও সনদের যে দুটি ধারায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সেই সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে, নারী উন্নয়ন নীতিমালা সংস্কার করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদিতাকে পরিহার করে নিজস্ব চিন্তা চেতনা থেকে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে,রাজনৈতিক কণ্ঠ সোচ্চার করতে হবে, নারীদের সম্পদ সম্পত্তিতে সমানাধিকার দিতে হবে, ১৯৭২-এর সংবিধানকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে; অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সভার সভাপতি এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, লিঙ্গীয় সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন জরুরি। এটা করতে হবে রাজনৈতিক দলের নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
সভার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি
মন্তব্য করুন