চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নৃশংস সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৬৩ জন, যার মধ্যে ১২৫ জনই শিশু। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন আরও ৭০ নারী ও শিশু।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সোমবার (২৮ এপ্রিল) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতির এই চিত্র তুলে ধরে। দেশের ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সংগঠনটি এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মার্চ মাসে ১৮ শিশুসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর ২ শিশুকে হত্যা করা হয় এবং ধর্ষণের শিকার হয়ে আরও ২ শিশু আত্মহত্যা করে।
লিখিত বক্তব্যে মহিলা পরিষদ জানায়, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার মাত্রা পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে, বিশেষ করে ১৮ বছরের নিচের কন্যাশিশুদের ক্ষেত্রে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার অবসানে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে বিচারের অনিশ্চয়তায় অপরাধের মাত্রা বাড়ছে।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিলের প্রসঙ্গও উঠে আসে। বক্তারা জানান, আগে এই নিয়োগে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক খসড়া প্রজ্ঞাপনে তা বাতিল করা হয়েছে, যা নারী শিক্ষার প্রসার ও ক্ষমতায়নের জন্য একটি বড় বাধা বলে মন্তব্য করেন তারা।
এ সময় ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় নারী কোটা বহাল রাখার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মৌলবাদী ও নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীগুলো ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীর অধিকার ও সমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল এবং সমাজকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সাত দফা সুপারিশও উপস্থাপন করে। সেগুলো হলো- ১. নারীবিদ্বেষী প্রচারণার বিরুদ্ধে কঠোর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ। ২. নারীর প্রতি সব সহিংসতার দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ। ৩. মব সহিংসতা দমনে জরুরি ব্যবস্থা। ৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। ৫. গণমাধ্যমে নারী নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরায় আরও সচেষ্ট হওয়া। ৬. মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস প্রতিহত করা। ৭. সমতাভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের পথে বিরোধী অপতৎপরতা দমন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে, শিশুধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা জামিন পাচ্ছে। এতে সারা দেশে নারীসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক নারীবিদ্বেষী অপসংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামেও অবমাননাকর কর্মকাণ্ড ঘটছে, যা নারী সমাজের অগ্রযাত্রার ওপর আঘাত বলে অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম, মাসুদা রেহানা বেগম এবং অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
মন্তব্য করুন