কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সবাইকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে’

রাজধানীর মিরপুরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কথা বলেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন। ছবি : কালবেলা
রাজধানীর মিরপুরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কথা বলেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন। ছবি : কালবেলা

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ-বিচারক সবাইকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর ১০ ডিসেম্বর), ২০২৪ উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল মামুন বলেন, আমরা সহিংসতার শিকার নারীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেই। বিনামূল্যে অর্থাৎ সরকার এই খরচ দিয়ে থাকে। আমাদের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরই আইনি সহায়তাপ্রত্যাশী নারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এখনো অনেক নারী সহিংসতার শিকার হলেও মামলা করছেন না।

তিনি বলেন, নারীদের বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পুলিশ ও বিচারক সবাইকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা যাবে।

কানাডিয়ান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি স্টেফানি সেইন্ট-লরেন্ট ব্রাসার্ড বলেন, বাংলাদেশে আমাদের নতুন হাইকমিশনার মনে করেন, শুধু পেশাগত জায়গা থেকে নয় বরং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে জেন্ডার সমতা নিয়ে কাজ করতে হবে। জেন্ডার সমতা নিয়ে কাজ করার সময় শুধু নারী-পুরুষ নিয়ে ভাবলে হবে না। এর বাইরেও যারা আছেন, তাদের কথাও মাথায় রাখতে হবে। তৃণমূল থেকে নীতিনির্ধারক পর্যায় পর্যন্ত কাজ করলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফ-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুমা সুলতানা।

সম্প্রতি এমজেএফ পরিচালিত একটি গবেষণার বরাতে তিনি জানান, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০ অনুযায়ী নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা কোনো ফৌজদারি অপরাধ নয়। এই আইনের অধীনে যথেষ্ট শাস্তির বিধান না থাকায় আইনজীবীরা এ-সংক্রান্ত মামলা নিতে খুব একটা আগ্রহ দেখান না। ফলে সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুরা এই আইনের সুফল পাচ্ছেন না।

ধর্ষণের ঘটনায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে এমন কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন উই ক্যান নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক জিনাত আরা হক। আইনি, আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানা জটিলতায় কীভাবে নারীরা বিচার থেকে বঞ্চিত হন সেসব উদাহরণ তার আলোচনায় উঠে আসে।

দাতা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে ইউএন উইমেনের রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, আমরা করোনা মহামারি পার করে এলেও, নারীর জীবনে এই মহামারির যে নেতিবাচক প্রভাব তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কারণ বৈশ্বিকভাবে এই বিষয়কে যতটা গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল তা দেওয়া হয়নি। একটা খুবই ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী তার সঙ্গীর হাতে খুন হচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত অনেক আইন ও নীতিমালা আছে কিন্তু সেগুলো সেভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। কারণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যে দায়বদ্ধতা ও ব্যক্তির আর্থিক সক্ষমতা দরকার তা নেই। আশার কথা হলো, আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে কিন্তু অগ্রগতি ধারা খুবই ধীরগতির।

নাগরিকতা-সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ডের ডেপুটি টিম লিডার ক্যাথারিনা কোনিগ মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সম্মিলিতি প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

উন্মুক্ত আলোচনায় নিজেদের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ট্রান্সনারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার তরুণ নারীরা।

অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্যে এমজেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা, খেলাধুলা, চাকরিসহ অনেক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। কিন্তু ধর্ম, সংস্কৃতি, প্রচলিত প্রথাসহ নানা কারণে আমাদের এই ক্ষমতায়ন, অগ্রগতি একটি জায়গায় এসে থমকে গেছে। আমরা অনেক ভালো আইন করেছি কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়নে বড় ব্যর্থতা রয়ে গেছে। তৃণমূল পর্যায়ে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জবাবদিহিতার অভাবে এই উপমহাদেশে বাল্যবিয়েতে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত লজ্জাজনক।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যত বাড়ছে ভৌগোলিকভাবে বিরূপ অবস্থানে থাকা এলাকার নারীদের প্রতি সহিংসতাও তত বাড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত পরিকল্পনার সময় এই নারীদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে নারীবান্ধব সমাজ গড়ার। বিচারব্যবস্থা সহজ করতে হবে। যতদিন নারী-পুরুষের সমতা না আসে, ঘরে-বাইরে নারীকে সম্মান না করা হয়, তার অবদানের স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, ততদিন নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশের মানুষ স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে : তারেক রহমান

ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে যমুনায় জামায়াত আমির

ইসলামি সংগীতে অভিনেতা আবুল হায়াত

এখন কী করবে ইমরান খানের পিটিআই?

২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপল বাংলাদেশ ব্যাংক

অগ্রিম টিকিটের রেকর্ড সৃষ্টি করে পর্দায় আসছে ‘মোয়ানা ২’

শাহবাগ থানা স্থানান্তর নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরও ৭ জনের প্রাণ

সাগরে গভীর নিম্নচাপ, সতর্ক সংকেত

সংঘাত এড়াতে স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রমে জোর দিল সরকার

১০

মালয়েশিয়া পালাতে গিয়ে আ.লীগ নেতা বাহারুল গ্রেপ্তার

১১

পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে হত্যা, স্ত্রীসহ ৩ জনের ফাঁসি

১২

সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে : মিয়া গোলাম পরওয়ার

১৩

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান চরমোনাই পীরের

১৪

সচিবালয়ে মহাসমাবেশের ডাক

১৫

আইনজীবী আলিফ হত্যায় জড়িতদের নিয়ে ইসকনের বার্তা

১৬

নোয়াখালীর হাতিয়ায় রকেট ফ্লেয়ার ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ দুই ব্যবসায়ী আটক

১৭

এজলাসে ডিমকাণ্ড / জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

১৮

এবার প্রকাশ্যে মাভাবিপ্রবিতে ছাত্রশিবির

১৯

ফেলে দেওয়া সিগারেটের ফিলটার থেকে তৈরি হচ্ছে খেলনা

২০
X