কন্যাশিশুর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন রোধে সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২৪ উপলক্ষে ‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের ৬৪টি জেলায় র্যাপিড রেসপন্স সেল গঠন করা হবে। যেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও শিশু-কিশোররা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমরা চেষ্টা করব সব ধরনের নির্যাতন রোধ করতে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আমাদের শিশু-কিশোররা যে সত্য ও সাহস দেখিয়েছে তা অতুলনীয়। তাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমুংপুল সংলগ্ন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শেষ হয়।
পৌনে ১১টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি চত্বরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এবং রঙিন ফেস্টুন সহকারে র্যালির মধ্য দিয়ে দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক তানিয়া খান, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। উন্মুক্ত আলোচনা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার ডলি। কন্যাশিশুদের মধ্য থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন জুবাইরা আক্তার জবা ও নওশীন।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘কন্যাশিশুদের জীবন অনেক সহজ, সরল, সুন্দর। কিন্তু একইসঙ্গে তারা নির্যাতন ও বৈষম্যেরও শিকার হয়। আমাদের কন্যাশিশুরা একটা নিরাপদ জায়গা চায়। আমি মনে করি, শুধু পরিবার নয়, পুরো বাংলাদেশটাই যেন নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য নিরাপদ হয়। আমরা যেন কন্যাশিশুর স্বপ্নে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। কন্যাশিশুদের স্বপ্নে যে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে সে বাংলাদেশে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ থাকবে, বাড়ির পাশে স্কুল থাকবে, তারা গাইবে, নাচবে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে নাজমা মোবারেক বলেন, ‘কন্যাশিশুরাই একদিন জায়া ও জননী হয়। আমরা জানি, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব। তাই কন্যাশিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে, তাদের যথাযথ শিক্ষা, পুষ্টি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘৫ আগস্ট এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের কারণে বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এখন কন্যাশিশুদের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় এসেছে। কন্যাশিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করতে হলে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে কন্যাশিশুদের কর্তব্য হলো জ্ঞানার্জন করা এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো কন্যাশিশুদের সর্বোচ্চ বিকাশের জন্য যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা।’
কেয়া খান বলেন, ‘কন্যাশিশুরা তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন চায়। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্র কন্যাশিশুদের বিকাশে পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। যদিও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সারা দেশে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারছি না। তাই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে আমাদের কাজ করতে হবে, নারী ও কন্যাশিশুদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
তানিয়া খান বলেন, ‘কন্যাশিশুদের নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলা এবং দিবস পালনের কারণ হলো আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য রোধে জনসচেতনতা তৈরি। কন্যাশিশুরা এখনো সর্বক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। তাই কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাদের বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষিত হওয়া ও যোগ্যতা অর্জনের জন্য কন্যাশিশুদের সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিটি কন্যাশিশু ভবিষ্যতের একজন মা। তাই তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা আসবে সেখানে প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ আলোচনা সভা শেষে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সভায় কন্যাশিশুদের চোখে আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এছাড়া জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক প্রয়াত নাছিমা আক্তার জলির জীবন ও কর্ম তুলে ধরে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় এবং তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
মন্তব্য করুন