সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারী যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে যৌনকর্মীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক অফ বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হল মিলায়তনে ‘যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে চাই সরকারি হস্তক্ষেপ’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
১০ দফা দাবির মধ্যে যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যৌনকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং দপ্তরের কার্যকরি ভূমিকা পালন করা। স্থানীয় প্রশাসনকে স্থানীয়ভাবে যৌনকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া। যৌনপল্লী উচ্ছেদ বন্ধ করা। পুলিশ দ্বারা যৌনকর্মীদের ওপর আইনের অপপ্রোয়গ বন্ধ করা। যৌনকর্মীদের সুস্থ, নির্বিঘ্ন, মূল স্রোতধারার পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ করা। যৌনকর্মীদের কবরস্থান এর জন্য কোনো পার্থক্য না করা। মূল স্রোত ধারার / সামাজিক ব্যবস্থায় কবরের ব্যবস্থা করা। যৌনকর্মীদের নির্বিঘ্ন জীবন যাপন এবং সার্বিক নিরাপত্তার প্রতি উপদেষ্টা মন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ। যৌনকর্মী নয় বরং মানুষ হিসেবে তাদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় নিপীড়ন এবং শোষণ বন্ধে ব্যবস্থা করা। সকল ধরনের নারী নির্যাতন এবং যৌন হয়রানি বন্ধে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি সেক্সওয়ার্কারস নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলি। এসময় যৌনকর্মীদের উপর নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার, যৌন কর্মীদের নির্বিঘ্ন জীবন যাপন এবং সার্বিক নিরাপত্তার প্রতি উপদেষ্টা মণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেমন যাত্রাবাড়ী, কোর্ট এলাকায়, শ্যামলী, শহীদ মিনার, মিরপুর মাজার রোড, ফার্মগেট, আসাদগেট, উত্তরা, কুড়িল ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন জায়গায় যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন করার ঘটনা উল্লেখ করেন আলেয়া আক্তার লিলি।
এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে কোনও নারীকে নির্যাতনসহ সহিংস আচরণ এবং তার ভিডিওচিত্র ধারণ ও প্রকাশ করা শুধু অপরাধই নয়, বরং তা মানবাধিকারের চরম লংঘন।
লিলি বলেন, এসব ঘটনায় এক যৌনকর্মীর সন্তান ট্রমাটাইজড হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে সন্তান ও মায়ের সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা, টানা-পোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক যৌনকর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
যৌনকর্মীদের সুরক্ষাসহ যৌনপল্লীগুলোর নিরাপত্তা চেয়ে লিলি বলেন, যৌনপল্লী যেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে তারা তো আর দেশের বাহিরে চলে যায়নি। তারা কোথায় যাবে? যদি তারা যৌনপল্লীতে থাকতো তাহলে কী কোনো অসুবিধা ছিল? কেন তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হলো। দেশে ১১টা যৌনপল্লী আছে। সেগুলো এখনো উচ্ছেদের আতংকে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্ক সাধারণ সম্পাদক নিলুফা, সাবেক সভাপতি শাহনাজ, সদস্য শ্রাবন্তী, ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধি ইভানা কথা, বঞ্চিত নারী সংগঠন নেত্রী রানুসহ দেশের তিন শতাধিক যৌনকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন