মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরসহ অংশীজনদের আপত্তির মুখেও বাতিল হচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেটে সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ৩ দিনের প্যাকেজ। পাশাপাশি থাকবে না ১৫ দিনের প্যাকেজও। এর বদলে গ্রাহকদের উদ্দেশে অপারেটরগুলো শুধু ৭ এবং ৩০ দিন মেয়াদি ইন্টারনেটের প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। ভোগান্তি ও বিভ্রান্তি কমার পাশাপাশি গ্রাহকদের অর্থ সাশ্রয় হবে; বিটিআরসি’র এমন দাবি প্রত্যাখ্যান অংশীজনদের। তবে গ্রাহক স্বার্থে ভবিষ্যতে মোবাইল ডেটাবিষয়ক নির্দেশিকা পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আজ রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডেটা এবং ডেটা সংশ্লিষ্ট প্যাকেজ সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা-২০২৩’ তুলে ধরা হয়।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এ সময় নির্দেশিকা সংক্রান্ত মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
এই উপস্থাপনায় বলা হয়, গ্রাহকের সার্বিক স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং কম মূল্যে বেশি ডেটা অফারের ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে গ্রাহকদের যত দিন মেয়াদের জন্য অপারেটর হতে যে পরিমাণ ডেটা অফার করে, একই পরিমাণ ডেটা ৩ দিন মেয়াদের স্থলে ন্যূনতম ৭ দিনের মেয়াদ প্রদান করা হবে। যাতে করে গ্রাহকেরা স্বাচ্ছন্দ্যে অধিক সময়সীমার মধ্যে প্রাপ্ত ডেটা খরচ করতে পারেন। ফলে গ্রাহকদের অব্যবহৃত ডেটা হারানোর সম্ভাবনা কমে আসবে। অবশ্য অপারেটরগুলো বর্তমানে ৩ দিনের প্যাকেজে কী পরিমাণ ডেটা কত টাকায় বিক্রি করছেন সেই তথ্য নেই কমিশনের কাছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে নাসিম পারভেজ বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলো প্রতিবছর ইন্টারনেটের দাম ২৫ শতাংশ করে কমিয়ে আনছে। এতে আশা করছি দাম আরও কমবে। তারপরও এই নির্দেশিকা আমরা ৬ মাস, এক বছর পর রিভিউ করব।
বিটিআরসি’র উপস্থাপনাতেই দেখা যায়, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ অংশ ৩ দিনের ইন্টারনেটের প্যাকেজ ব্যবহার করে। অপারেটরগুলোর বিগত তিন মাসের ডেটা প্যাকেজ সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে উপস্থাপনায় বলা হয়, ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারী ৩ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন। একক অপারেটরের ক্ষেত্রেও এই হার সর্বোচ্চ।
ডেটার প্যাকেজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের পছন্দের এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত বলে মনে করেন মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার।
তিনি বলেন, গ্রাহকদের মতামত বিবেচনা করতে হবে। ৩ দিনের প্যাকেজ শুধু অপারেটরদের জন্য ব্যবসাবান্ধব না বরং গ্রাহকদের জন্য সুবিধাজনক। এই প্যাকেজ বাতিলের মাধ্যমে গ্রাহকদের স্বাধীনতাকে সীমিত করা হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যবহার কমবে যার প্রভাব রাজস্বতেও দেখা যাবে।
এ সময় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, আমরা অপারেটররা সবাই চাই, গ্রাহকদের সন্তুষ্টি বজায় রাখতে। সেটা করতে পারলেই আমাদের ব্যবসায়িক সাফল্য বজায় থাকবে। আজ যেটা দেওয়া হলো, এটা ওষুধের মতো দেওয়া হলো। আগামীতেও যেন গ্রাহক স্বার্থে আলোচনা করে পরিবর্তন করা যায় সেই আহ্বান রইল।
তবে সমালোচকেরা না বুঝেই ৩ দিনের প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, আমরা যা করেছি গ্রাহকদের জন্য করেছি। কোনো ব্যবসায়ীকে কোনো সুবিধা দেওয়ার জন্য না। ব্যবসায়ীদের জন্য যেটা করা যায় সেটা আইনে উল্লেখিত আছে। যারা ৩ দিনের প্যাকেজ রাখার সমালোচনা করছেন, তারা না বুঝেই বলেন।
৩ দিনের প্যাকেজের সমালোচনা করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, তারা ব্যবসা করতে এসেছেন। ৩ দিনে ১৫ জিবি ইন্টারনেট দেবে যেখানে ১ জিবিও ব্যবহার হয় না। বাকিটা তারা হজম করে দেয়। মেয়াদ এবং প্যাকেজ চক্রের উদ্দেশ্যই হচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা করা। ভয়েস কলের ওপর দিয়ে ব্যবসার দিন শেষ; আগামীর ব্যবসা ডেটা নিয়ে। আমিও চাই গ্রাহক তার কেনা ডেটা দিয়ে যা খুশি তাই করবে, যতদিন খুশি রেখে ব্যবহার করবে। এ জন্যই আমরা বেশ যুদ্ধ করেই ডেটা নিয়ে এই কাজটা করছি।
আগামীতে মোবাইল ডেটার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণে সরকারের পরিকল্পনা আছে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ভয়েসের মতো ডেটার দামেও মনে হয় আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। এবার আমরা সেটা করি নাই কারণ প্রথমবার গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া দেখতে চাই। মোবাইল খাতের উন্নতি ঠিক সমতলে হয়নি। আমরা ভয়েস কলের সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেওয়ার পর ভয়েস কল নিয়ে কিন্তু আর কোনো অভিযোগ পাই না। ডেটা নিয়েও তেমন কিছু করতে হলে আমরা হয়তো সেদিকেও হাঁটব। তবে এটা এমন কিছু না যা পরিবর্তনযোগ্য না। জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনে এটাও পরিবর্তন করা যাবে। বিটিআরসি আছে তো সেই কারণেই।
প্রসঙ্গত, নতুন নির্দেশনায় অপারেটরভেদে ৮৫ থেকে ৯৫টি প্যাকেজের বদলে ৪০টি প্যাকেজে নামিয়ে আনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র অন্যান্য কর্মকর্তা এবং টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন