বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মাঝে সমন্বয় না থাকায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ খাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এমএফএস আর্থিক সেবা দেয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এটার দেখভাল করে। আবার এমএফএসগুলোর কাজ হয় টেলকো এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তাহলে এগুলো কে দেখবে? বিটিআরসি না অন্য কেউ? এভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মাঝে কোনো সমন্বয় নেই, সেই সমন্বয় দরকার। সমন্বয়হীনতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এখন সময় এসেছে যে, আমাদের দরকার ‘জয়েন্ট রেগুলেশন’।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিটিআরসি কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন কমিশনের প্রধান।
দেশীয় প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল সেবার বর্ধিতকরণে টেলিযোগাযোগের সুবিধাবৃদ্ধি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত সংস্কার করতে হলে ডিজিটাল সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে রাখতে হবে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে তাদের সঙ্গে বিটিআরসি কোনো আলোচনায় বসেনি। ডিজিটাল সেবাপ্রদানকারীদের কথা শুনতেই আজকের এই আয়োজন। রাজস্ব আদায় বিটিআরসির মূল দায়িত্ব না, তবে বিটিআরসি এ বিষয়ে বেশ কঠোর। কতটুকু রাজস্ব আদায় করা হবে সেটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। বিটিআরসির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সীমান্ত পর্যন্ত (প্রান্তিক অঞ্চলে) নিয়ে যাওয়া আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।
সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ইন্টারনেটের মূল্য অনেক বেশি। ড. ইউনূস বিভিন্ন খাতে সংস্কারে আগ্রহী যেখানে টেলিযোগাযোগ খাতও রয়েছে। আইসিটি বিভাগে ২১টি প্রকল্প চলছে, যেখানে ডাটা সেন্টারের মতো কাজও রয়েছে। এ সময়ে ডাটাই মূল জিনিস। তবে ডাটা ইউনিফরমিটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকের মূল প্রবন্ধে চালডাল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম আলিম জানান, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ ই-কমার্স বাজারে অনেক পিছিয়ে আছি। ভারত, বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় সাত গুণ বড়। এই অবস্থার উন্নয়নে ডেটা বা ইন্টারনেট ব্যবহারের বিকল্প নেই। ডেটার ব্যবহার অবকাঠামো খরচ বাঁচায়। শিক্ষা অর্জনকে সহজতর করে কর্মহীনদের কর্মক্ষম করে তোলে। তাই ডেটার ওপর কোনো বাধা থাকা উচিত নয়।
সভায় মোবাইল অপারেটরদের পাশাপাশি এখন থেকে কন্টেন্টের সঙ্গে জড়িতদের আমন্ত্রণ জানানোয় বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স সদস্য এবং বিডিজবস প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, আমদের ক্রয়ক্ষমতার চেয়ে ডাটার দাম বেশি। তাই ব্রডব্যান্ডের মতো মোবাইল ইন্টারনেটেরও দাম বেঁধে দেওয়া দরকার। বিটিআরসির রেভিনিউ শেয়ার এবং এসওএফ ফান্ডের বিষয় পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অন্তত দুই বছর এসওএফ ফান্ড বন্ধ রাখা দরকার। গুগল, ফেসবুক ও আকামাই যেন দেশে আসে সে জন্য কন্টেন্টের দায় শুধু কন্টেন্টদাতার ওপর রাখতে হবে। তাহলে এসব বিদেশি টেক জায়ান্ট দেশে আসবে এবং অফিস খুলবে। তাদের জন্য সহায়ক নীতিমালা করতে হবে।
দারাজের চিফ রেগুলেটরি এফেয়ার্স অফিসার এএইচএম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো বলেন, ডিজিটাল যুগে কোনো কিছু পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। তাই রেগুলেটরিকে বিষয়গুলো গতানুগতিকভাবে না দেখে, আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
সভায় অন্যদের মাঝে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ, শেয়ারট্রিপের প্রতিষ্ঠাতা সাদিয়া হক, এডটেক প্রতিষ্ঠান ‘শিখো’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শাহির চৌধুরী, পিকাবুর প্রধান নির্বাহী মোরিন তালুকদারসহ বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন