শত শত কোটি বছর আগে আমাদের প্রিয় বাসস্থান এই পৃথিবী যেমন ছিল, আজ তেমনটা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে পৃথিবী। আর এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে আহ্নিক গতি। আহ্নিক গতির কারণে দিন-রাতের পরিবর্তন হয়। আর তাতেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের বেঁচে থাকা না থাকা নির্ভর করে। শত শত কোটি বছর আগে পৃথিবীতে দিনের পরিমাণ ছিল গড়ে প্রায় ১৩ ঘণ্টা। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে দিন।
পুরো মানব ইতিহাসজুড়ে অনেকটাই নীরবে পৃথিবীর ওপর বসে রয়েছে চাঁদ। স্বর্গীয় এই বস্তুর টানেই পৃথিবীর বুকে ঢেউ কাটে। খেলা চলে দিন-রাতের। পৃথিবীর সব সভ্যতার ক্যালেন্ডারও চাঁদের প্রচ্ছন্ন বা সরাসরি প্রভাব স্পষ্ট। আবার গুবরে পোকার মতো কিছু প্রাণি আছে, যারা চাঁদের আলো ব্যবহার করেই পথ খুঁজে নেয়। আর পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্য চাঁদের কোনো বিকল্প নেই।
কারও কারও মতে, চাঁদের কারণেই পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা হয়েছে। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ আবহাওয়া ব্যবস্থার পেছনে চাঁদের ঘূর্ণয়নের সম্পর্ক রয়েছে। এই আবহাওয়া ব্যবস্থাই আজ আমাদের জীবনকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু চাঁদ নাকি একটু একটু করে আমাদের পৃৃথিবীর নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে ‘লুনার রিসেশন’ বলে। অতি সম্প্রতিই বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, চাঁদ ঠিক কতটা দ্রুত পৃথিবী থেকে সরে যাচ্ছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রতি বছর দেড় ইঞ্চি করে পৃথিবী থেকে সরে যাচ্ছে চাঁদ। আর চাঁদ যতই পিছিয়ে যাচ্ছে, তার প্রভাবও পড়ছে পৃথিবীতে। বলা হচ্ছে, এতে করে দীর্ঘ হচ্ছে পৃথিবীর দিন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েল হলোওয়ের জিওফিজিক্সের একজন অধ্যাপক ডেভিড ওয়াল্টহ্যাম বলেছেন, এটা পুরোটাই স্রোতের ব্যাপার। জোয়ারের টান পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীর করে দেয় এবং চাঁদ সেই শক্তিটি কৌণিক ভরবেগ হিসেবে অর্জন করে।
এই প্রভাবের কারণেই বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর সময়ের হিসাব। সর্বশেষ বিশ্লেষণ বলছে, ১৬০০ শতাব্দীর শেষদিক থেকে প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ১ দশমিক শূন্য ৯ মিলিসেকেন্ড করে দিনের গড় সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য হিসাবগুলো অবশ্য ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। ওই সব হিসাব অনুযায়ী, দিনের এই গড় বৃদ্ধির পরিমাণ ১ দশমিক ৭৮ মিলিসেকেন্ড।
চাঁদ বর্তমানে পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অথচ শুরুর দিকে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল মাত্র ২ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। আবার শুরুর দিকে খুব দ্রুত ঘুরত পৃথিবী। তাই পৃথিবী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুইবার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখত। এর ফলেই হয়ত দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়। এমনকি ফটোসিনথিসিস অর্গানিজমের বায়োকেমিস্ট্রিও এ কারণেই হয়ত বদলে গিয়েছিল।
দিন বড় হওয়ার পেছনে চাঁদের এই পিছিয়ে যাওয়াকে দায়ী করা হলেও এই প্রক্রিয়াও কখনই একই রকম ছিল না। আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সাল্টার একজন ভূতাত্ত্বিক ভানিয়া লোপেজ দে আজারেভিচের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৫৫০-৬২৫ মিলিয়ন বছর আগে প্রতি বছর চাঁদ ২ দশমিক ৮ ইঞ্চি করে সরে গিয়ে থাকতে পারে। চাঁদের পিছিয়ে যাওয়ার পরিমাণ আগেও পরিবর্তিত হয়েছে, সেটা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।
মন্তব্য করুন