টেকনির্ভর এই ডিজিটাল যুগে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে হরহামেশাই বিভিন্ন ধরনের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে থাকি। সেটা হতে পারে গুগল, ইয়াহু অথবা বিং (Google, Yahoo, Bing)। বিভিন্ন ধরনের সার্চ ইঞ্জিন থাকলেও ইউজারদের কাছে বর্তমানে সব থেকে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে-গুগল।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে আমরা সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বেশি গুগোল সার্চ ইঞ্জিনই ব্যবহার করে থাকি। আমরা যখন গুগল সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু লিখে সার্চ করি ঠিক তখন গুগল সব থেকে কম সময়ে সবচেয়ে ভালো ফল অথবা কনটেন্টটি আমাদের সামনে তুলে ধরে। কিন্তু আমরা কি জানি আমাদের গুগল মামা এই কাজটি কীভাবে করে থাকে? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
আপনার, আমার, আমাদের গুগল মামার সবচেয়ে কম সময়ে আমাদের সার্চ করা কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এ প্রক্রিয়াটি সম্ভব হয় এসইও (SEO) অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (SEO - Search Engine Optimization) মাধ্যমে। একটি বিষয় লক্ষ করলে দেখবেন, আমরা যখন গুগল সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু লিখে সার্চ করি তখন আমাদের সামনে এক ধরনের পেইজ ওপেন হয় যাকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজ (SERP - Search Engine Result Page) বলা হয়ে থাকে।
গুগলের এই সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে আমরা ক্রমানুসারে বিভিন্ন ধরনের ওয়েভসাইটের লিংক দেখতে পাই যেখান থেকে আমরা আমাদের সার্চ করা তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁজে পেতে পারি। কখনো কখনো আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি গুগলের প্রথম পেইজের শুরুতে, মাঝে অথবা শেষে পাই আবার কখনো কখনো গুগলের পরবর্তী পেইজগুলোতে পাই। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে এমনটা কেন হয়?
সাধারণত প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনেরই নিজস্ব কিছু ওয়েব ক্রোলার বা সার্চ রোবট বা সার্চ স্পাইডার (Crawler/robot/spider)বিদ্যমান থাকে। গুগল সার্চ ইঞ্জিনও এর ব্যতিক্রম নয়। আর সার্চ ইঞ্জিনের (Search Engine) এই ওয়েব ক্রোলার বা সার্চ রোবট বা সার্চ স্পাইডার প্রায় সবসময়ই ওয়েবে থাকা একটি ওয়েবপেইজ অন্য একটি ওয়েবপেইজে, ঠিক একইভাবে এক ওয়েবসাইট থেকে অন্য ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়ায়। এই ক্রোলার বা রোবট বা স্পাইডারসমূহ (Crawler/robot/spider) বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিদির্ষ্ট শ্রেণিতে সজ্জিত করে এবং সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীর সার্চ করা তথ্য অনুসারে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেইজে (SERP - Search Engine Result Page) প্রদর্শন করে। হয়তোবা বিষয়টি আপনাদের মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে সার্চ ইঞ্জিনে আগে থেকেই এমন কিছু অ্যালগরিদম (Algorithm) তৈরি করে রাখা হয়, যার মাধ্যমে আমরা গুগল ইউজাররা যখন কোনো কিছু লিখে সার্চ দেই তখন সবচেয়ে কাছাকাছি, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যবহুল ফলটিই আমাদের কাছে সবার আগে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে প্রতিটি সার্চ কুয়েরির সময় গুগলের বিল্ড-ইন অ্যালগরিদম (Algorithm)অনেক সাইটের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তুলনা করতে থাকে। তুলনা করার সময়ে সার্চ ইঞ্জিন অর্থাৎ গুগল যে ওয়েবসাইটটিকে সবথেকে ভালো মনে করে সে ওয়েবসাইটটিকে সবার আগে নিয়ে আসে অর্থাৎ গুগোলের সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজের প্রথম পেইজে অবস্থান দেয়, তেমনিভাবে অপেক্ষাকৃত কম প্রাসঙ্গিক মনে করা ওয়েবসাইটকে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজের ক্রমানুসারে পরবর্তী পেইজে অবস্থান দেয়। যে কোনো ওয়েবসাইটকে গুগোলের সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজের প্রথম পেইজে অবস্থান করাকে সার্চ ইঞ্জিনের ভাষায় র্যাংক (Rank) বলা হয়ে থাকে।
আর যে কোনো ওয়েবসাইটকে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে (SERP - Search Engine Result Page) র্যাংক (Rank) করাতে সব থেকে বেশি ভূমিকাই রাখে এসইও (SEO) অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO - Search Engine Optimization)। আপনাদের মনে আরও একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে পারে ওয়েবসাইট র্যাংক (Rank) করার এই কাজটি এসইও (SEO) কীভাবে করে থাকে?
এসইও (SEO)-সম্পর্কিত উপরের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে আমরা বলতে পারি যে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization) হলো এমন একটি গতিশীল ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি/কৌশল যা অনুসরণ করার মাধ্যমে একটি সার্চ ইঞ্জিন, সেটা হতে পারে গুগল, ইয়াহু অথবা বিং (Google, Yahoo, Bing) কোনো একটি ওয়েবসাইটকে ঐ সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ রেজাল্টের প্রথম দিকে প্রদর্শন করতে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization) অনুসরণ করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনে ইউজার কর্তৃক সার্চ করা তথ্য সার্চ ইঞ্জিনের বিল্ড-ইন অ্যালগরিদম (Algorithm) অনেক সাইটের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তুলনা করতে থাকার যে প্রক্রিয়া সেটাকে অপটিমাইজ (Optimie) করে ইউজারের সার্চ করা তথ্যের সঙ্গে সবচেয়ে কাছাকাছি মিল থাকা ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে (SERP- Search Engine Result Page) র্যাংক (Rank) করানোর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে।
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসইও (SEO) অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO-Search Engine Optimization) সম্পর্কে চলুন আরও কিছু জেনে নেয়া যাক-
প্রকৃতপক্ষে এসইও (SEO) প্রধানত ২ প্রকার
১। অর্গানিক এসইও (ORGANIC SEO), ২। পেইড এসইও (PAID SEO).
কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে অর্গানিক এসইওকে প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যেমনঃ-
১। অন পেইজ এসইও (ON PAGE SEO), ২। অফ পেইজ এসইও (OFF PAGE SEO), ৩। টেকনিক্যাল এসইও (TECHNICAL SEO).
সার্চ ইঞ্জিনের ভাষ্য মতে এসইও (SEO)কৌশল এর উপরে ভিত্তি করে এসইও (SEO) মূলত তিন টাইপের হয়ে থাকে। যেমনঃ-
১. হোয়াইট হ্যাট এসইও (WHITE HAT SEO), ২. ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (BLACK HAT SEO), ৩. গ্রে হ্যাট এসইও (GREY HAT SEO).
মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজির উপরে ভিত্তি করে এসইও আবার ২ ধরনের।
১। লোকাল এসইও ( LOCAL SEO), ২। ইন্টারন্যাশনাল এসইও ( INTERNATIONAL SEO).
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আশা করি, এসইও (SEO)-সম্পর্কিত অনেক তথ্যই তো জানা হলো-এসইও (SEO) কি, কীভাবে কাজ করে, এর সুবিধা কি ইত্যাদি।
এখন চলুন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক- ‘টেকনির্ভর এই ডিজিটাল যুগে এসইও (SEO) পেশা হিসেবে কেন অমূল্য রতন।’
টেকনির্ভর বর্তমান বিশ্বে দিনকে দিন যেমনিভাবে ওয়েবসাইট তৈরির চাহিদা বাড়ছে ঠিক তেমনিভাবে বাড়ছে একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় আনার চাহিদা। যেহেতু এসইও (SEO) ছাড়া অর্গানিকভাবে কোনো ওয়েবসাইটকেই সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় আনা সম্ভব হয় না সেহেতু ওয়েবসাইট কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় আনতে প্রয়োজন একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজার। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন যে, আগামীতেও একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজারের চাহিদা কি রকম হতে পারে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে খুব ভালভাবেই ধারণা করা যায় যে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ভবিষ্যতে সকল কার্যক্রমসমূহ ওয়েবভিত্তিক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, তখন প্রতিটা ওয়েবসাইটকেই সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে (SERP-Search Engine Result Page) র্যাংক (Rank) করানোর জন্য প্রতিটি ওয়েবসাইট নিজেরা নিজেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে যার ফলস্বরূপ সবাই এসইও (SEO)-র প্রতি আরও গুরুত্ব দিবে এবং এসইও (SEO) নিয়ে কাজ করাবে। এতে করেও একজন দক্ষ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজারের চাহিদা ব্যাপক আকারে বেড়ে যাবে। তাই আপনি যদি একজন প্রফেশনাল এসইও এক্সপার্ট হতে পারেন তাহলে শুধু দেশে নয় দেশের বাইরেও আপনার প্রচুর ডিমান্ড তৈরি হবে।
তাছাড়া বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার প্রচুর পরিমাণে প্রসার ঘটছে, প্রায় প্রতিদিনই ব্যবসায়ীরা তাদের নতুন নতুন ব্যবসা অথবা চলমান ব্যবসার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করছে। আর এসকল অনলাইন ব্যবসাগুলোর জন্যও এসইও (SEO) একটি অপরিহার্য মাধ্যম। কারণ এসইও (SEO)-এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ওয়েবসাইটকে অর্গানিকভাবেই সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে (SERP-Search Engine Result Page) ভালো অবস্থানে আনা যাবে। যার ফলে সেই ওয়েবসাইটগুলোতে বেশি পরিমাণে ট্রাফিক পাওয়া যাবে, ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি পাবে। আর আমরা সকলেই জানি যে, বেশি ট্রাফিক মানেই বেশি বিক্রি বা সার্ভিস প্রদানের সুযোগ। সুতরাং ব্যবসাকে প্রসার করতে এবং টার্গেট অডিয়েন্সের নিকট পোঁছাতে এসইও (SEO)-এর কোনো বিকল্প নাই। আপনারা হয়তো বলতে পারেন গুগল অ্যাডস (Google Ads)-এর মাধ্যমে পেইড মার্কেটিং করেও তো এ কাজগুলো করা সম্ভব। হ্যাঁ হয়তো কখনো কখনো সম্ভব কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবেন বিজ্ঞাপন অথবা পেইড মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে যে কোনো ওয়েবসাইট বা ওয়েবসাইটের কোনো প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় ঠিকই কিন্তু যখন আপনার করা বিজ্ঞাপনের সময় শেষ হয়ে যাবে তখন কিন্তু মার্কেটিংও বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া পেইড মার্কেটিং এ যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় তার থেকে অনেক কম খরচে এসইও (SEO) অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO-Search Engine Optimization)-এর মাধ্যমে অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।
আপনারা জানলে হয়তো অবাক হবেন এসইও (SEO)-র সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ওয়েবসাইটে একবার র্যাংক (Rank) আসলে সহজে ওই ওয়েবসাইটকে র্যাংক(Rank) থেকে সরানো সম্ভব হয়ে উঠে না। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO- Search Engine Optimization)-র মাধ্যমে অর্গানিকভাবে আপনি যদি একবার আপনার কোনো ওয়েবসাইটকে বা ওয়েবসাইটের কোনো প্রোডাক্টকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে (SERP- Search Engine Result Page) র্যাংক (Rank) নিয়ে আসতে পারেন তাহলে সেটার সুবিধা লম্বা সময় ধরে ভোগ করতে পারবেন, যা কিনা পেইড মার্কেটিংয়ে কখনোই সম্ভব না
পরিশেষে বলাই যায়, আপনি একজন প্রফেশনাল এসইও এক্সপার্ট হন কিংবা একজন ব্যবসায়ী হন আপনাকে মানতেই হবে- ‘টেকনির্ভর এই ডিজিটাল যুগে এসইও (SEO) কেন অমূল্য রতন।’
ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইফুল ইসলাম শিবলু: ওয়েব ডেভেলপার, এসইও এক্সপার্ট
মন্তব্য করুন