টেলিযোগাযোগ সেবায় অতিরিক্ত কর আরোপ করার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে বলে মনে করছে টেলিকম অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটব।
এমটব নেতৃবৃন্দ এবং টেলিকম খাতের ঊর্ধ্বতন পেশাজীবীরা বলছেন, কর আরোপে ব্যবহারকারীদের মাঝে টেলিকম সেবা গ্রহণের পরিমাণ কমবে। ফলে শেষ পর্যন্ত সরকারই আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর বনানীতে এমটব সচিবালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেন তারা। এ সময় তারা টেলিকম খাতের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক এবং সারচার্জ প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানান সরকারের প্রতি।
সংবাদ সম্মেলনে টেলিকম অপারেটর রবি’র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, প্রায় ১৯ কোটি সচল সিমকার্ড থাকলেও প্রকৃত ব্যবহারকারী প্রায় ১১ কোটি। তাদের মাঝে আবার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৮ কোটি। ফলে বিশাল একটি গোষ্ঠী টেলিকম সেবার বাইরে রয়েছে। তাদের যদি সেবার আওতায় আনা যেত তাহলে তারা ডিজিটাল ব্যাংকিং, ই-কমার্সের মতো সেবায় আসত এবং সরকার সেখান থেকে আয় করতে পারত। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়লে জিডিপি’তে অবদান বাড়ে ১ শতাংশ।
সাহেদুল আলম আরও বলেন, সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর আগে থেকেই সারচার্জ আছে ১ শতাংশ। টেলিকম সেবার ওপর থেকে এই দুই ধরনের কর প্রত্যাহার চাই আমরা।
এ সময় এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, কর আরোপের কারণে গ্রাহকদের যদি সেবা নেওয়ার পরিমাণ কমে, তাহলে কিন্তু সরকারের আয় কমবে। ফলে কর আরোপের যে উদ্দেশ্য সরকারের, সেটি কিন্তু বাস্তবায়িত হবে না। টেলিকম খাতের রেভিনিউ কমলে, সরকারেরও আয় কমবে।
গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন বলেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছে আবার ডিজিটাল সার্ভিসে কর বাড়াচ্ছে। দেশে ১৯ কোটি সিম থাকলেও মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারী রয়েছেন ৫০-৬০ শতাংশের মতো। ফলে এখানে বাজার বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
কর বৃদ্ধির ফলে গ্রাহকদের খরচ কীভাবে বাড়বে তার ওপর উপস্থাপনা তুলে ধরেন বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান। তিনি জানান, আগে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৭৫ টাকার সেবা পেতেন। বর্তমানে সেই খরচ বেড়েছে। এখন ১০০ টাকা রিচার্জে প্রায় ৭২ টাকার সেবা পাবেন। এর সাথে অন্যান্য কর যুক্ত হলে এর প্রকৃত সংখ্যা নেমে আসবে ৫৯ টাকায়।
এ সময় বিশ্বের কয়েকটি দেশে টেলিকম সেবার ওপর বিদ্যমান করের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মালেশিয়ায় ৬%, থাইল্যান্ড ৭%, নাইজেরিয়া ৭.৫%, সিঙ্গাপুর ৯%, ইন্দোনেশিয়া ১১%, ফিলিপাইন ১২%, ক্যাম্বোডিয়া ১৩%, ভারত ১৮%, শ্রীলঙ্কা ২৩.৫%, নেপাল ২৬.২%, বাংলাদেশ ৩৩.২৫% এবং পাকিস্তান ৩৪.৫% কর আরোপিত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই করের হার বর্তমানে ৩৯ শতাংশ।
মন্তব্য করুন