সম্প্রতি মোবাইল কলের মাধ্যমে ফোন হ্যাক হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। আসলেই কি মোবাইল কলের মাধ্যমে ফোন হ্যাক করা সম্ভব? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে ফ্যাক্টচেক নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ।
কালবেলার পাঠকদের জন্য ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-
ফেসবুকে যা ছড়িয়েছে : বর্তমানে হ্যাকাররা ফোন দিয়ে কথা বলে আপনার থেকে কোনো তথ্য চাইবে না। বরং +৯৯ অথবা +৯২ কোড নাম্বার থেকে আসা কল রিসিভ করা মাত্রই আপনার গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য হ্যাকারের কাছে চলে যাবে। তাই প্রথম ডিজিট +৯৯ অথবা +৯২ থাকলে সেই কল রিসিভ করবেন না।
সিদ্ধান্ত : সাধারণত শুধু ফোনকলের মাধ্যমে ফোন হ্যাক করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ফোনকল সরাসরি ফোন হ্যাকের উৎস নয়। ফলে, +৯২ এবং +৯৯ দিয়ে শুরু হওয়া নম্বর থেকে আসা ফোনকল রিসিভ করলেই ফোন হ্যাক হয়ে যাবে, এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই। কোনো সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের অভিজ্ঞতার কথা কেউ শেয়ার করেছেন এমন শোনা যায়নি। যারা দাবি করেছেন, তারা অভিমত দিয়েছেন মাত্র। সেটা প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নয়।
গুজবের উৎস
৮ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে একজন পুলিশ অফিসার তার ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেন, +৯২ এবং +৯৯ দিয়ে শুরু নম্বর থেকে আসা ফোনকল রিসিভ করলে ফোন হ্যাক হয়ে যাবে। পরে তার দাবিটিকে সূত্র ধরে একাধিক গণমাধ্যমে এটি প্রচার করা হয়। এরপরেই এ দাবিটি ফেসবুকে খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান :
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করা হয়। এভাবে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার এভিজি (AVG) ওয়েবসাইটে ফোন হ্যাকিং নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছে, সাধারণত শুধু ফোনকলের মাধ্যমে ফোন হ্যাক করা সম্ভব নয়। কল রিসিভার যদি কোনো তথ্য প্রদান না করেন তাহলে ফোন হ্যাক করে নেওয়া সম্ভব নয়।
অপরদিকে সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যাভাস্টের ওয়েবসাইটে ফোন হ্যাকিং সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেওয়া হয়েছে যে, ফোনকল সরাসরি ফোন হ্যাকের উৎস হয় না। কিন্তু ফোনকল বিভিন্ন প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অ্যাভাস্টের আর একটি প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, ফোনকলের মাধ্যমে সরাসরি হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া অসম্ভব। তবে ফোনকলের মাধ্যমে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাটাক করা যায়। সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টার্মকে সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ক্যাসপারেস্কি ব্যাখ্যা করেছে এভাবে যে, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো এক ধরনের প্রতারণা কৌশল যা মানুষের ভুলকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য, অনুমতি লাভ, অথবা মূল্যবান সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশে ব্যবহৃত হয়।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে একজন পুলিশ অফিসার ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছিলেন যে, +৯২ এবং +৯৯ দিয়ে শুরু নম্বর থেকে আসা ফোনকল রিসিভ করলে ফোন হ্যাক হয়ে যাবে। অবশ্য তিনি পরে ১৩ এপ্রিলে আর একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, আগে ফোনকল রিসিভ করা সংক্রান্ত যেই তথ্য তিনি দিয়েছিলেন তা সঠিক ছিল না। তথ্যের মাঝে কিছু অসংগতি ছিল। তাই তিনি পূর্বের ভিডিওটি ডিলিট করে দিয়েছেন এবং নতুন ভিডিও পোস্ট করেছেন।
বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করে জানা যায়, ফোন নম্বরের শুরুতে যোগ চিহ্ন (+) এর পরে থাকা সংখ্যাগুলো আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড বা কান্ট্রি কোড নামে পরিচিত। প্রতিটি দেশের নিজস্ব একটি কান্ট্রি কোড থাকে। বাংলাদেশের কান্ট্রি কোড হলো ৮৮০। পাকিস্তানের কান্ট্রি কোড হলো ৯২। অপরদিকে, ৯৯ হলো কিছু দেশের কান্ট্রি কোডের প্রথমাংশ। যেমন তাজিকিস্তানের কান্ট্রি কোড ৯৯২, তুর্কমেনিস্তানের কান্ট্রি কোড ৯৯৩, এবং আজারবাইজানের কান্ট্রি কোড হলো ৯৯৪।
সুতরাং সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কেবল ফোনকল রিসিভের মাধ্যমে ফোন হ্যাক হওয়া সম্ভব না। যদিও কলের মাধ্যমে প্রতারক ব্যক্তিগত তথ্য পেয়ে থাকলে তা নিয়ে প্রতারণা করতে পারে।
তাই +৯২ এবং +৯৯ দিয়ে শুরু নম্বর থেকে আসা ফোনকল রিসিভ করলে ফোন হ্যাক হয়ে যাবার দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ চিহ্নিত করেছে।
মন্তব্য করুন