ভারত গত কয়েক বছর ধরে চাঁদে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতকে চাঁদে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় চন্দ্রযান-৩। শুক্রবার (১৪ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের উদ্দেশে রওনা করবে। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে তার কাউন্টডাউন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সব ঠিক থাকলে শুক্রবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ হবে চন্দ্রযান ৩। পুরো ভারত এখন সেই মুহূর্তের অপেক্ষায়।
ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযানের এই মহাকাশযান তৈরি হয়েছে অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার- এই তিনটি অংশ নিয়ে।
এর আগে আরও দুই বার চাঁদে যাওয়ার চেষ্টা করে ভারত। কিন্তু চাঁদের মাটিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় সেসব মহাকাশযান। চাঁদ ঘিরে ব্যাপক আগ্রহী দেশটি তাতে দমে না গিয়ে গবেষণা আরও জোরালো করে।
এ যাত্রা সফল হলে ভারত চতুর্থতম দেশ হিসেবে চাঁদে অবতরণ করবে। এর আগে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন।
সবকিছু ঠিক থাকলে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ২৩ বা ২৪ আগস্ট পৌঁছাবে।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অভিযানে তিনটি ধাপে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমত চাঁদের মাটিতে নিরাপদে অবতরণ করাই মূল লক্ষ্য। এটি সফল হলে পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।
পরের ধাপে মহাকাশযানটিতে সংযুক্ত চাঁদের ভূপৃষ্ঠে চলাচলে সক্ষম রোবট ল্যান্ডার থেকে আলাদা হয়ে সক্রিয় হয়ে উঠবে। তৃতীয় ধাপে ওই রোবট নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং চাঁদের গঠন সম্পর্কে ডাটা সংগ্রহ করবে।
ওই রোবটের নাম রাখা হয়েছে ‘প্রজ্ঞা’ এবং ল্যান্ডারটিকে ডাকা হচ্ছে ‘বিক্রম’ নামে।
উৎক্ষেপিত হতে যাওয়া চন্দ্রযান-৩ যেভাবে চাঁদে পৌঁছাবে তার একটি ধারণা দিয়েছে বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণের পর পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা দূরত্বে পৌঁছে রকেট প্রথম ধাপে মহাকাশযানটিকে ছুড়ে দেবে।
এরপর মহাকাশযানটি প্রচণ্ড গতিতে বারবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চাঁদের কক্ষপথের দিকে এগোতে থাকবে। চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের পর একইভাবে প্রদক্ষিণ করে উপগ্রহটির ভূপৃষ্ঠের দিকে এগিয়ে যাবে।
চাঁদের ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি দূরত্বে পৌঁছে দ্বিতীয় ধাপে মহাকাশযান থেকে ল্যান্ডার আলাদা হবে। এরপর দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পর ল্যান্ডার থেকে রোভার আলাদা হয়ে কাজ শুরু করবে।
নাসার তথ্যমতে, ১৯৫৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭০টি সফল চন্দ্রাভিযান হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য ব্যর্থ অভিযান হয়। এসব অভিযানের বেশির ভাগ মহাকাশযানই পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করেই ধ্বংস হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সময় চাঁদে পৌঁছানোর আলোচনা তীব্র হয়। তখন মহাকাশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ নীরব যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন চাঁদে মানুষের পা ফেলার ঘোষণা দিয়ে জয় পায় যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর ১৯৮০-এর দশকে কোনো চন্দ্রাভিযান হয়নি। ১৯৯০ সালে জাপান চাঁদে যাওয়ার দৌড়ে যোগ দেয়। ২০০০ সালের পর চীন, ভারত ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি চাঁদের কক্ষপথে মহাকাশযান পাঠায়।
মন্তব্য করুন