সিলিকন ভ্যালির জমজমাট প্রযুক্তি জগতে আলি পারতোভি একটি উজ্জ্বল নাম। ইরানে জন্মগ্রহণকারী এই উদ্যোক্তা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রযুক্তি খাতে নিজের অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ছিলেন অনলাইন বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম ‘লিংকএক্সচেঞ্জ’-এর প্রতিষ্ঠাতা দলের একজন, যা ১৯৯৮ সালে মাইক্রোসফট ২৬৫ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।
এরপর তিনি গড়ে তুলেছেন মিউজিক শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ‘আইলাইক’, যা ২০০৯ সালে মাইস্পেস ২০ মিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। তার ভাই হাজি পারতোভির সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেছেন শিক্ষামূলক অলাভজনক সংস্থা ‘কোড ডট ওআরজি’ এবং বিনিয়োগ করেছেন ফেসবুক, এয়ারবিএনবি ও ড্রপবক্সের মতো টেক জায়ান্টে।
প্রযুক্তি জগতের অভ্যন্তরে পারতোভি ভাইদের নাম যে কোনো স্টার্টআপের জন্য শক্তিশালী সমর্থনের প্রতীক। তবে আলি পারতোভির খ্যাতি এখন প্রযুক্তির গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। যার পেছনে রয়েছে তার প্রতিষ্ঠিত ভেঞ্চার ফার্ম ‘নিও’। আট বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই ফার্মের লক্ষ্য ছিল ব্যতিক্রমী প্রতিভা খুঁজে তাদের বিকাশে সহায়তা করা। আজ নিও সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।
নিওর বিনিয়োগ তালিকায় রয়েছে বিকেন্দ্রীকৃত সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ‘ব্লু স্কাই’, যা ২০২৫ সালে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে অনলাইন প্রেডিকশন মার্কেট ‘কালশি’, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
নিওর সাফল্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো এমআইটির শিক্ষার্থী মাইকেল ট্রুয়েল। ২০১৭ সালে গুগলে ইন্টার্নশিপের সময় তিনি পারতোভির সঙ্গে দেখা করেন। পারতোভি তাকে একটি হাতে লেখা কোডিং টেস্ট দেন, যা ট্রুয়েল মাত্র ১৫ মিনিটে সমাধান করেন। এই সাক্ষাৎ আজ রূপ নিয়েছে এনিস্ফিয়ার নামক স্টার্টআপে। এই কোম্পানির বাজারমূল্য এখন প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
ভেঞ্চার ক্যাপিটালের প্রচলিত ধারা বদলাতে চায় নিও। নির্দিষ্ট থিম বা দলে বিনিয়োগ না করে, তারা কলেজে থাকা প্রতিভাবানদের খুঁজে তাদের পরামর্শ দিয়ে বড় করে তোলে। ‘নিও স্কলারস’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতিবছর ৩০ জন শিক্ষার্থীকে সেমিস্টার গ্যাপ নেওয়ার জন্য ২০ হাজার ডলার অনুদান দেওয়া হয়। এই অনুদানের বিনিময়ে নিও তাদের কোম্পানির কোনো অংশীদারত্ব দাবি করে না।
২০২২ সাল থেকে নিও প্রতিবছর ২০টি নতুন স্টার্টআপকে সহায়তা দিচ্ছে। তাদের স্কলারস প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে কগনিশন (৪ বিলিয়ন ডলার মূল্য), পিকা ল্যাবস (৭০০ মিলিয়ন ডলার মূল্য) এবং চাই ডিসকভারি (৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগপ্রাপ্ত) এর মতো কোম্পানি গড়ে তুলেছে।
পারতোভি বলেন, গত বছর ওপেনএআইতে যোগ দেওয়া নতুন কর্মীদের সবাই নিও স্কলারস প্রোগ্রামের সুবিধাভোগী ছিল।
পারতোভি প্রতিভা বাছাইয়ে ৪টি গুণের ওপর জোর দেন। যথা- প্রযুক্তিগত দক্ষতা, উদ্যোক্তার মনোভাব, প্রচলিত ধারার বাইরে চিন্তা ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।
নিওর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। প্রতিবছর তাদের আবেদনপত্রের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। ২০২৫ সালে নিও ৩২০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে পারতোভি নিজেও উল্লেখযোগ্য অংশ বিনিয়োগ করেছেন। তাদের বিনিয়োগকারীদের তালিকায় রয়েছেন শেরিল স্যান্ডবার্গ, বিল গেটস ও রিড হফম্যান।
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে পারতোভি বলেন, মানুষের সেবা করতে থাকুন। অর্থ নিজেই আসবে। এমন পণ্য তৈরি করুন, যা মানুষ ভালোবাসবে। তাহলেই সাফল্য আসবে।
মন্তব্য করুন