তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ তথ্যপ্রযুক্তিখাতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনা সভায় এমনটা জানানো হয়।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিভাগের সভাকক্ষে সচিব ডা. মো. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ২০১০ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে কিন্তু এর ফল পাইনি দেশের মানুষ। টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, যার মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নিয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এর পরও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স এর জুন, ২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশ ১০০ মধ্যে ৬২ স্কোর করেছে। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম ও ভুটানের পরে বাংলাদেশের অবস্থান।
তিনি বলেন, ওকলা স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স মে, ২০২৪ এর ইন্টারনেট গতির তালিকায় ১৪৭ দেশের মধ্যে ইন্টারনেট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯ তম। এক্ষেত্রে কেনিয়াও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। পাশাপাশি ব্রড ব্র্যান্ড ইন্টারনেট সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮। তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের উপরে।
নাহিদ বলেন, আইএমএফ এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি সূচকে জুন, ২০২৪ এ ১৭৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩ তম। তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, রুয়ান্ডা, ঘানাও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্ক ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২৩ এর ডিজিটাল জীবনমান সূচকে বিশ্বের ১২১ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২ তম। এক্ষেত্রে আগের বছর থেকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে পাঁচ ধাপ। সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ৫ শতাংশের কম। ‘কি গভর্মেন্ট’ সূচকে বাংলাদেশ তালিকার ৭৩ এ, যা বৈশ্বিক গড়মানের নিচে। সিকিউরিটি র্যাকিংয়ে ৮৫ তম স্থানে এবং ইন্টারনেট ক্রয় ক্ষমতার হিসেবে ৭৭ তম অবস্থানে। মার্কিন সাময়িকী সিইও ওয়ার্ল্ড এর এপ্রিল ২০২৪ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিংয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ সেখানে সেরা গন্তব্যের ৩০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯ নম্বরে। তালিকায় ভারত, পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের অবস্থান। এসব সূচক দেখলে ঠিকভাবে প্রতিয়মান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত সুযোগ সুবিধা দেশের জনগণ পায়নি বরং এক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা নাহিদ আরও বলেন, প্রায় সব জায়গায় দেখা যায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হয় না, এক দু বার সময় বাড়ানোর পরে আবারও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। তাই এখন যে কয়েকটি প্রকল্পের সময় বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে তা যেন বুঝে শুনে বাড়ানো হয়। প্রকল্পগুলো ঠিক মতো শেষ করতে পারলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ খাতে অনেক অগ্রগতি হবে যার সুফল দেশবাসী ভোগ করবে। প্রকল্পের ব্যয় কমানো, দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, সফটওয়্যারে সবসময় প্রকল্পের আপডেট দেওয়ার এবং সময়মতো প্রকল্প শেষ করার বিষয়েও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
সভায় জানানো হয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের চারটি দপ্তরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট নয়টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বিটিসিএল পাঁচটি, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড একটি, ডাক অধিদপ্তর দুটি এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসি একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। সার্বিকভাবে প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় অগ্রগতি ১ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অগ্রগতি ৩ দশমিক আট চার শতাংশ।
সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দপ্তর ও সংস্থার প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকরা নিজ নিজ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন।