পাঁচ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের একাংশ বিক্ষোভ করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারের নবম ফ্লোরে হাইটেক পার্কের অফিসে প্রায় ২০ জন কর্মচারী এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভে নেতৃত্ব দানকারীরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
কর্মচারীদের আরেকটি অংশ বলছে, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বিক্ষোভকারীদের অনেকেই নিজেদের ভোল পাল্টে বৈষম্যের শিকার হওয়ার তকমা লাগিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইটেক পার্কের ফ্লোরে জড়ো হয়ে জনা বিশেক কর্মচারী পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবিগুলোর মধ্যে পদোন্নতিবঞ্চিতদের পদোন্নতি দেওয়া, পদোন্নতি না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পদোন্নতি না দেওয়ার পেছনে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, হাইটেক পার্কের বার্ষিক আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় এনে অপসারণ করা এবং হাইটেক পার্কের প্রথম জনবল কাঠামো প্রণয়নকারী এক কর্মকর্তার (পরবর্তীতে পরামর্শক) অপসারণ। এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন হাইটেক পার্কের হিসাবরক্ষক মোশাররফ হোসেন পারভেজ, কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক-কাম অফিস সহকারী সেলিম মাহমুদ এবং শর্মিলী খাতুন।
তবে বিক্ষোভে নেতৃত্ব প্রদানকারীদের বিরুদ্ধেই উঠেছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ। কর্মচারীদের আরেকটি অংশের একাধিক সূত্র জানান, মোশাররেফ হোসেন তার স্ত্রী নাসরিন খাতুনকে হাইটেক পার্কে ‘স্টোর কিপার’ চাকরি পাইয়ে দেন। নাসরিন খাতুনের নিয়োগ এবং কর্মকান্ড নিয়ে তৎকালীন এমডি হোসনে আরার কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। এর প্রেক্ষিতে নিজেই চাকরি ছেড়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে আন্দোলনের বিপক্ষে ব্যাপক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এসব স্ট্যাটাসের স্ত্রিনশট এসেছে কালবেলার কাছে।
কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক-কাম অফিস সহকারী সেলিম মাহমুদের তদবীর করে স্ত্রী কবিতা খাতুনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটি (সিসিএ) তে কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী পদে চাকরি দিয়েছেন। অন্যদিকে শর্মিলী খাতুন চাকরি পেয়েছিলেন স্বামী শফিকুল ইসলামের তদবিরে। শফিকুল ইসলাম আইসিটি বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সময় তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন শফিকুল ইসলাম।
হাইটেক পার্কের একটি সূত্র পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, আগের সরকার পতনের পর থেকে নিজেদের অনিয়ম প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে আতঙ্কিত ছিলেন এই তিন কর্মচারী। সেজন্যই অন্যদের উস্কে দিয়ে এখন পক্ষ পরিবর্তন করে বৈষম্যের শিকার কর্মচারীর তকমা নিচ্ছেন। হাইটেক পার্কের অনুমোদিত পদ না থাকায় পদোন্নতি হয়নি। বছরের পর বছর পদোন্নতি হচ্ছে না। শুধু তারাই পদোন্নতি পায়নি বিষয়টা এমন না। এসব বিষয়ে বক্তব্য চাইলে এই তিন কর্মচারী কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফরউল্লাহ কালবেলাকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অদ্যবধি তাদের সাথে কোন বৈষম্যের কথা শুনিনি। তারাও কখনও কোন দাবিদাওয়া জানায়নি। আজ হুট করেই তাদের দাবির কথা শুনছি। দাবি দিয়েই ১ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছে। কয়েক বছরে যা হয়নি সেটা করতেও তো সময় লাগে। ৭ দিন সময় চেয়েছি তাদের কাছে। যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করা হবে।
মন্তব্য করুন