বিভিন্ন তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ফেসবুককে বাংলাদেশ থেকে যে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান সহায়তা করে তারা ‘মোটিভেটেড’ বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আজ বুধবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) ফেসবুক প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এমন মন্তব্য করেন পলক।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যক্তিগত মতাদর্শ হিসেবে একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক এবং তাদের কর্মকাণ্ড সরকার ও দেশবিরোধী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে সবধরনের বিধিনিষেধ সরিয়ে সেগুলো স্বাভাবিক হওয়ার ঘোষণাও এসময় দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের গুজব ও মিথ্যা কনটেন্ট শনাক্ত এবং সত্যতা যাচাইয়ে বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সঙ্গে কাজ করে থাকে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করে পলক বলেন, তাদের (মেটা) জন্য ফ্যাক্ট চেক করে বেশকিছু বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বলেই গোপনীয়তার জন্য তবে আমরা যেটুকু বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশি ফেসবুককে যে ফ্যাক্টচেকিং ফার্ম, লিগ্যাল ফার্ম হেল্প করে তারা ‘মোটিভেটেড’। তাদের ব্যক্তিগত মতাদর্শ, তাদের কার্যক্রম, প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান এবং বিভিন্ন পাবলিক স্টেটমেন্ট তাতে দেখা গেছে যে তারা রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থক। তাদের কর্মকাণ্ড, অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড সবকিছুই সরকারবিরোধী, দেশবিরোধী। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়েও তাদের পূর্বপুরুষ, পরিবারের সদস্য বা আত্মীয় ছিলেন তাদের অনেক (মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে) সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ফলে আমাদের অনুমান এখানে ফেসবুকের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। করলে অনেক কনটেন্ট তারা সরিয়ে ফেলত।
এর আগে একইদিন সকালে আরও দুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউব এবং টিকটকের সঙ্গে বৈঠকের নির্ধারিত সময়সূচি ছিল। প্রতিনিধি না পাঠিয়ে আগামীতে বৈঠকের জন্য প্রস্তুতি নিতে সময় চেয়ে ইউটিউব ই-মেইল বার্তা দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রতিমন্ত্রী। তবে টিকটকের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পলিসি প্রধান ফেরদৌস মুত্তাকিন বিটিআরসি কার্যালয়ে এসে বৈঠকে অংশ নেন। আর ফেসবুক তথা মেটার পাঁচজন প্রতিনিধি অনলাইনে বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠকে যুক্ত হন। মেটার সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া অঞ্চলের পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর সারিম আজিজ, কনটেন্ট পলিসি ম্যানেজার শশাংক শাহ, লিগ্যাল এক্সপার্ট নয়নতারা নারায়ণ, ল এনফোর্সমেন্ট এক্সপার্ট কৃষনা এবং পাবলিক পলিসি ম্যানেজার ও বাংলাদেশের পলিসি লিড রুজান সরওয়ার বৈঠকে অংশ নেন। সব বৈঠকেই প্রতিমন্ত্রী পলক, বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোটা আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে দেওয়া অনুরোধে সবথেকে বেশি সাড়া দিয়েছে টিকটক। সরকারের অনুরোধে ১০ দিনে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত কনটেন্ট ও আইডি সরিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। প্রায় ২০ শতাংশ কনটেন্ট সরিয়েছে ইউটিউব। সর্বনিম্ন ১৩ শতাংশ কনটেন্ট ও পেইজ সরিয়েছে ফেসবুক। অবশ্য এমন প্রেক্ষাপটেই গতকাল বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর থেকে বিধিনিষেধ উঠিয়ে সেগুলো স্বাভাবিক হওয়ার ঘোষণা দেন পলক।
তিনি বলেন, কিছুটা সময়ের জন্য সাময়িকভাবে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলাম। সেগুলো প্রত্যাহার করছি। ফেসবুক, টিকটক এবং ইউটিউবের কার্যক্রমে বাধা রাখছি না। তবে সবাইকে গুজব ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের অনুরোধ করেন প্রতিমন্ত্রী।
মন্তব্য করুন