পরিচয় গোপন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার উপায় হচ্ছে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন। ভিপিএনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা। ভিপিএনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড গোপন রেখেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট বিক্ষোভ-সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে দেশে ভিপিএনের ব্যবহার অধিক হারে বেড়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ইন্টারনেট সীমিত করা হয়। পরদিন (১৮ জুলাই) মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব প্রতিরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে সে সময় তিনি উল্লেখ করেছিলেন। একই দিন সন্ধ্যায় সঞ্চালন লাইনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও। ফলে দেশজুড়ে সব ধরনের ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। এরপর রোববার (২৮ জুলাই) বিকেল ৩টায় মোবাইলের ফোর-জি সেবা চালু করা হয়। ইন্টারনেট চালু করা হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকায় অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করছেন। ভিপিএনের মাধ্যমে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক চালাচ্ছেন। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ থেকে ভিপিএন ব্যবহারের হার পাঁচ হাজার গুণ বেড়েছে। কারণ, মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ও নিরাপদে যোগাযোগের বিকল্প উপায় খুঁজছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলাদেশে কি ভিপিএন ব্যবহার করা অবৈধ? এককথায় এর উত্তর হলো- আমাদের দেশে ভিপিএন ব্যবহার করা অবৈধ নয়। দেশে এখনো ভিপিএনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিংবা প্রযুক্তিগত কারণে এর ব্যবহার বন্ধ করারও উপায় নেই।
সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভিপিএন ব্যবহারে সতর্ক করেছেন। পাশাপাশি এই প্রাইভেট নেটওয়ার্ক টানেল ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ভিপিএন থেকে বিরত থাকি। তথ্য সুরক্ষার জন্য বিরত থাকি। ভিপিএন যে দিচ্ছে, সে পুরো তথ্যউপাত্ত পাচ্ছে। ভিপিএন চালু রেখে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আর্থিক লেনদেন করলে, গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল তথ্য অন্যের কাছে চলে যেতে পারে।
ভিপিএন নিয়ে নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ ও এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার-এপিনিকের নির্বাহী কমিটির সদস্য সুমন আহমেদ সাবির জানান, ভিপিএন একটি বৈধ প্রযুক্তি। ভিপিএন ব্যবহার করা হয় নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার ও তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
তিনি আরও জানান, ‘ভিপিএনের মূল উদ্দেশ্য হলো সাইবার জগতে নিরাপত্তা দেওয়া। ভিপিএন সাইবার ঝুঁকি বাড়ায় না বরং কমায়।’
ভিপিএন একটি শক্তিশালী টুল যা ব্যবহারকারীর অনলাইন নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়ক। তবে ভিপিএনের ব্যবহারসংক্রান্ত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন