মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও তার সহ-অভিযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর। কিন্তু তাদের বহনকারী স্টারলাইনার মহাকাশযানটিতে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে পৃথিবীতে ফিরতে পারেননি তারা। কীভাবে ফিরবেন তারা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
শনিবার (২৭ জুলাই) ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে রয়েছেন দুই মহাকাশচারী।
তবে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা স্টেশনে আটকে থাকা মহাকাশচারী সুনীতা এবং বুচ উইলমোর নিরাপদে রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে নাসা।
এক ভারতীয় মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সুনীতাদের অবস্থার কথা বর্ণনা করেন একটি শব্দের মাধ্যমে। তিনি জানিয়েছেন, ‘ত্রিশঙ্কু’-র মতো ঝুলে রয়েছে সুনীতারা। এর মধ্যে নাসা জানায়, ঠিক কী কারণে বিগড়ে গিয়েছে বোয়িং স্টারলাইনার, তার কিছুটা হদিস পেয়েছে তারা।
নাসা দাবি করেছে, স্টারলাইনার থেকে হিলিয়াম গ্যাস লিক হচ্ছে। যদিও স্পষ্ট করে জানায়নি যে সুনীতা এবং তার সহ-মহাকাশচারী বুচ আদৌ ফিরতে পারবেন কি না বা ওই বোয়িং স্টাইলাইনার মহাকাশযানেই তাদের ফেরা সম্ভব হবে কি-না।
বোয়িং সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই স্টারলাইনার মহাকাশযানটি সর্বাধিক ৯০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তারপর তার ব্যাটারি নিঃশেষিত হতে পারে। এর অর্থ আমেরিকার মহাকাশ গবেষকদের হাতে আর ৪০ দিন রয়েছে।
সুতরাং এই ৪০ দিনের মধ্যেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সুনীতা এবং বুচ ওই স্টারলাইনার মহাকাশযানেই পৃথিবীতে ফিরবেন না কি স্পেসএক্সের ক্রিউ ড্রাগন বা রাশিয়ার সয়ুজ মহাকাশযানে ফিরবেন!
নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ জানান, সুনীতা এবং বুচ ‘ভালো মেজাজ’-এ রয়েছেন। এর আগেও তারা দীর্ঘ সময়ের অভিযানে শামিল হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আকস্মিক’ কিছু ঘটলে কী করতে হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে নাসার। তবে তার আগে ওই স্টারলাইনার বোয়িংয়েই যাতে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টাই চলছে।
স্টারলাইনারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মার্ক ন্যাপ্পি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, মহাকাশচারীদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যথেষ্ট ভালো মহাকাশ যান (বোয়িং স্টারলাইনার) রয়েছে।
নাসার বিবৃতিতে জানানো হয়, রিঅ্যাকশন কন্ট্রোল সিস্টেম (আরসিএস)-এর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সেই নথি স্টারলাইনার নির্মাণকারী দলটি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে। বুচ এবং সুনীতা কীভাবে ফিরবেন, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মহাকাশযান বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চড়ে গত ৫ জুন মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ওই দুই নভোচারী পাড়ি দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশ্যে। অভিযান নিয়ে উত্তেজনাও ছিল তুঙ্গে। কারণ, প্রথমত দীর্ঘ অপেক্ষা এবং প্রস্তুতির পর এটিই বোয়িং-এর প্রথম মহাকাশচারী নিয়ে যাত্রা।
দ্বিতীয়ত, এই ‘ক্রু ফ্লাইট টেস্ট’ অভিযানের উদ্দেশ্য বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণের জন্য বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ সফরের রাস্তা সুগম করা। শুরুতে কথা ছিল, ২১ দিন পরই ফিরছেন সুনীতারা। কিন্তু হঠাৎই বেঁকে বসল বোয়িং। স্টারলাইনার ওড়ার আগেও রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল।
যাত্রাপথে আরও নানা যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। রকেটের পাঁচটি ‘ম্যানুভারিং থ্রাস্টার’ খারাপ হয়ে যায়, সমস্যা দেখা দেয় একটি ধীর গতির ‘প্রপেল্যান্ট ভালভ্’-এও। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সুনীতাদের ফেরা।
মন্তব্য করুন