মনে করুন, আপনি একটি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন, কিন্তু আপনার সেই নতুন ওয়েবসাইটে তেমন একটা ট্রাফিক বা ভিজিটর নেই। এটি নিঃসন্দেহে আপনার জন্য খুবই হতাশাজনক। তা ছাড়া আপনি কেন, যে কেউই চাইবে তার তৈরি করা নতুন ওয়েবসাইটিতে বেশি বেশি ট্রাফিক বা ভিজিটর আসুক। যাতে করে ওয়েবসাইটিকে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেইজে ধীরে ধীরে নিয়ে আসা যায় এবং র্যাংক করানো যায়। কারণ, ওয়েবসাইট একবার র্যাংক এলে সহজে সেই ওয়েবসাইটকে র্যাংক থেকে সরানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।
ওয়েবসাইটে এই ট্রাফিক তো অনেকভাবেই আনা যায়। তবে এদের মধ্যে অর্গানিক ট্রাফিককেই বেশি মূল্যবান বলে মনে করা হয়। সাধারণত যেই ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক বা ভিজিটরের আনাগোনা বেশি সেই ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেইজে র্যাংক করা সম্ভাবনাও বেশি। যে কোনো ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক বা ভিজিটর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে অন পেইজ এসইও-ই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনাদের মনে এ মুহূর্তে প্রশ্ন আসতেই পারে, ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক নিয়ে আসতে অন পেজ এসইও তে কী কী করতে হয়?
প্রকৃতপক্ষে ‘অন পেইজ এসইও’ হলো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের অভ্যন্তরে কোনো ওয়েব পেইজে বিভিন্ন জিনিস (ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট, মেটাডেটা, এমনকি কোডের মতো অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলিকে) পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপ্টিমাইজ করা এবং অর্গানিকভাবে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে নিয়ে আসা বা র্যাংক করা।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে এবং অর্গানিকভাবে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে নিয়ে আসতে বা র্যাংক করতে ওয়েবসাইটের ভিড়তে থাকা ওয়েব পেইজের মধ্যে কনটেন্ট কিওয়ার্ড, টাইটেল ও সাব-টাইটেল, ইমেজ, ইউআরএল, ইন্টারনাল লিংক, এক্সটার্নাল লিংক, মেটা ট্যাগ, মেটা ডেসক্রিপশন ইত্যাদিকে অপ্টিমাইজ করে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য উপযুক্ত করে তোলাকেই অন পেইজ এসইও বলা হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা অন্তত কিছুটা হলেও ধারণা করতে পেরেছেন, অন পেইজ এসইও কী, কীভাবে কাজ করে, এর সুবিধা কী, এমনকি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়ে আসতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবার তাহলে চলুন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক- ‘ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে অন-পেইজ এসইও-র কোনো বিকল্প নেই।’
মূলত অন পেজ এসইও-তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়। যেমন- কি-ওয়ার্ড রিসার্চ, টাইটেল ও সাব-টাইটেল অপ্টিমাইজেশন, মেটা ডেসক্রিপশন, হেডিংট্য়াগ অপ্টিমাইজেশন, ইমেজ অপ্টিমাইজেশন, অল্টার টেক্সট অপ্টিমাইজেশন, ইন্টারনাল লিংক, এক্সটার্নাল লিংক, কিওয়ার্ড ডেনসিটি, পার্মালিংক অপ্টিমাইজেশন, সাইটের স্পিড অপ্টিমাইজেশন ইত্যাদি। এবার আমরা অন পেজ এসইও-এর এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধাপে ধাপে জানবো-
কি-ওয়ার্ড রিসার্চ
ওয়েবসাইটের যেমন কনটেন্ট খুবই জরুরি তেমনি অন পেজ এসইও এর জন্য কিওয়ার্ড রিসার্চ জরুরি। কিওয়ার্ড রিসার্চ হলো এমন কিছু নতুন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ তৈরি করার পদ্ধতি যেগুলো সাধারণত লিখে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে। সহজভাবে বলতে গেলে, গুগলে মানুষ যা লিখে সার্চ করে সেটাই হলো কি-ওয়ার্ড। ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট দ্রুত র্যাংক করানোর জন্য কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করা জরুরি। কি-ওয়ার্ড মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। শর্ট টেইল কিওয়ার্ড ও লং টেইল কিওয়ার্ড। সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত র্যাংক করার জন্য শর্ট টেইল কিওয়ার্ড থেকে লং টেইল কিওয়ার্ড অধিক কার্যকর। কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করার জন্য অনলাইনে বেশ কিছু ফ্রি এবং পেইড টুলস পাওয়া যায়। আপনাদের সুবিধার্থে কয়েকটি কি-ওয়ার্ড রিসার্চ টুলসের নাম দেওয়া হলো। যেমন- Ahrefs, Ubersuggest, Keyword Surfer, Whatsmyserp, Google Keyword Planner, Google Search Console ইত্যাদি।
টাইটেল ও সাব-টাইটেল অপ্টিমাইজেশন
ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো গুগল সার্চে দ্রুত দেখার জন্য টাইটেল ও সাব-টাইটেল অপ্টিমাইজেশন করা খুবই প্রয়োজন।এমনভাবে কন্টেন্টের টাইটেল,সাব-টাইটেল লিখতে হবে,যা কি না হবে সম্পূর্ণ এসইও ফ্রেন্ডলি। কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করার পর প্রাপ্ত মূল কিওয়ার্ড অথবা ফোকাস কি-ওয়ার্ড যাই বলি নাহ কেন অন্তত একবার যেন টাইটেলের আগে বা পরে থাকে।টাইটেল লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে টাইটেল যেন ৬০ ক্যারেক্টারের বেশি না হয়। চেষ্টা করতে হবে এটি যেন সবসময় ৫০-৫৬ ওয়ার্ডের মধ্যে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ফোকাস কিওয়ার্ড হলো অন পেজ এসইও আপনারা টাইটেল অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে অন-পেইজ এসইও-র কোনো বিকল্প নেই। এমন কিওয়ার্ড টাইটেলে ব্যবহার করতে পারেন।
মেটা ডেসক্রিপশন
ওয়েবসাইটে থাকা ওয়েব পেইজের একটি আর্টিকেল র্যাংক করানোর জন্য মেটা ডেসক্রিপশন অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।কারণ মেটা ডেসক্রিপশনের মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনকে ওয়েবসাইট ও ওয়েবসাইটে থাকা কনটেন্ট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়। এটি সাধারণত HTML ট্যাগে হয়ে থাকে। মেটা ডেসক্রিপশন ১৫০ ক্যারেক্টারের মধ্যে লিখতে হয় তা না হলে ডেসক্রিপশন ব্রোকেন দেখায়। মেটা ডেসক্রিপশন ১২০ ক্যারেক্টারের মধ্যে লিখতে পারলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। অন পেজ এসইও এর ক্ষেত্রে মেটা ডেসক্রিপশনেও অন্তত একবার হলেও মূল ফোকাস কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
হেডিংট্য়াগ অপ্টিমাইজেশন
হেডিং ট্যাগ সার্চ ইঞ্জিন এর জন্য খুব গুরত্তপূর্ণ।ওয়েবসাইটে থাকা ওয়েবপেজের স্ট্রাকচার এবং ওয়েব কন্টেন্ট index করার জন্য সার্চ ইঞ্জিনের ক্রোলার বা রোবট বা স্পাইডারসমূহ হেডিংগুলো ব্যবহার করে।
এই জন্য় অন পেজ এসইও এর ক্ষেত্রে হেডিংট্য়াগ অপ্টিমাইজেশন করে নিতে হয়। h1 হেডিং কে মেইন হেডিং হিসেবে ব্যবহার করা উচিত,সেইসাথে প্রতিটি ওয়েব পেজে কেবল একটি মাত্র h1 হেডিং ট্যাগ ব্য়বহার করা উচিত । অন্যদিকে h2, h3, h4, h5 এবং h6 হেডিংকে এভাবে ক্রমান্বয়ে এক বা একাধিক বার ব্য়বহার করা যায়।
ইমেজ অপ্টিমাইজেশন
ওয়েবসাইটের অন পেজ এসইও এর মধ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ইমেজ বা ছবি অপ্টিমাইজ করা। ওয়েবসাইটের আর্টিকেলগুলোতে এমনভাবে ইমেজ যুক্ত করতে হবে যেন তার সাইজ খুব কম হয়। সব সময় চেষ্টা করতে হবে ইমেজের সাইজ যেন ১০০ কিলোবাইট এর মধ্যে রাখার। এজন্য় ‘Image Compressor’ টুলস ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে করে ছবি সাইজ কম করা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘Tinypng’ ওয়েবসাইট ব্য়বহার করা যেতে পারে। ‘Tinypng’ ওয়েবসাইট একটি খুবই কার্যকর ফ্রি ইমেজ কম্প্রেসার টুলস। ইমেজ অপ্টিমাইজেশন করার ক্ষেত্রে ইমেজের ফরম্যাট Jpeg, Png ও Webp রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া ইমেজ অপ্টিমাইজেশন করার জন্য ফোকাস কি-ওয়ার্ড ছবির টাইটেল, ডেসক্রিপশন ও অল্টারনেটিভ টেক্সটে যুক্ত করা যেতে পারে।
অল্টার টেক্সট অপ্টিমাইজেশন
অল্টার টেক্সট বা alt text বা অল্টারনেটিভ টেক্সট যাই বলি নাহ কেন অন পেজ এসইও এর জন্য় অল্টার টেক্সট অপ্টিমাইজেশন করা খুবই কার্যকর। কারণ, আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন অনেক সময় ওয়েবসাইটের ইমেজ বা ছবি লোড হতে দেরি হয় আবার মাঝে মাঝে ইমেজ বা ছবি প্রদর্শন করতে সমস্য়া দেখায়। তাই ইমেজ বা ছবিতে যদি alt text বা অল্টারনেটিভ টেক্সট ব্য়বহার করা হয় তাহলে ইমেজ বা ছবি পদর্শন করতে সমস্য়া দেখা গেলেও alt text দেখে ভিজিটর এবং সার্চ ইঞ্জিন ধারণা করতে পারবে ছবিটি কিসের।তাই ওয়েবসাইটের প্রতিটি ইমেজ বা ছবিতেই অল্টার টেক্সট বা alt text বা অল্টারনেটিভ টেক্সট ব্যবহার করতে হয়।
ইন্টারনাল লিংক
ওয়েবসাইটের অন পেজ এসইও করার জন্য ইন্টারনাল লিংক প্রয়োজন। ইন্টারনাল লিংক ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বা ভিজিটর বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ইন্টারনাল লিংক করার জন্য ওয়েবসাইটের ভিতরে যে কোন ওয়েব পেইজের আর্টিকেলের লিংক অন্য আরেক ওয়েব পেইজের আর্টিকেলে যুক্ত করা হয়ে থাকে। যেহেতু ওয়েবসাইটে থাকা ওয়েব পেইজের মধ্যে অথবা আর্টিকেলের মধ্যে লিংক করা হয় তাই এটাকে ইন্টারনাল লিংক বলা হয়। ইন্টারনাল লিংক করার মাধ্য়মে ভিজিটররা খুব সহজেই ওয়েবসাইটে বিদ্য়মান থাকা ওয়েব পেইজগুলোতে এক পেইজ থেকে অন্য পেইজে সহজেই ভিজিট করতে পারবে।
এক্সটার্নাল লিংক
এক্সটার্নাল লিংক মূলত এক ধরনের বহিরাগত লিংক। এক্সটার্নাল লিংক করার জন্য ওয়েবসাইটের সঙ্গে এমন কিছু ওয়েবসাইটের লিংক কপি করে ওয়েব পেইজের আর্টিকেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যাতে করে ওয়েবসাইটের বাইরে থেকেও ট্রাফিক বা ভিজিটর আসতে পারে। এ জন্য ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের লিংক ব্যবহার করা হয়। এটাই হলো এক্সটার্নাল লিংক।
অ্যাংকর ট্যাগ অপ্টিমাইজেশন
অ্যাংকর ( anchor) ট্য়াগ অর্থাৎ ট্যাগ হচ্ছে একধরনের ক্লিকযোগ্য টেক্সট যা ওয়েবসাইটের মধ্যে লিংক তৈরি করতে ব্য়বহার হয়। ট্যাগে থাকা ক্লিকযোগ্য টেক্সট যার ওপর ক্লিক করে ভিজিটররা একটা নতুন পেইজে যেতে পারে। অ্যাংকর ট্য়াগে টেক্সট এমন দেওয়া উচিত যা দেখে ভিজিটর এবং সার্চ ইঞ্জিন যেন বুঝতে পারে যে এই লিংকে ক্লিক করে যে পেইজে যাওয়া যাবে সেই পেইজে কী ধরনের আর্টিকেল বা কন্টেন্ট আছে। তাছাড়া সার্চ ইঞ্জিনের ক্রোলার বা রোবট বা স্পাইডারসমূহ ট্য়াগে থাকা লিংকগুলোকে ক্রোল করে এক পেইজ থেকে অন্য পেইজে আসা যাওয়া করে। তাই অন পেজ এসইও করার জন্য অ্যাংকর ট্য়াগ অর্থাৎ ট্যাগ অপ্টিমাইজেশন করা খুবই প্রয়োজন। ট্যাগ ঠিক মতো অপ্টিমাইজেশন না করলে ব্রোকেন লিংক তৈরি হবে। এর ফলে লিংকে এরর দেখা দিবে। < a href="https://www.camsbd.com/"> ক্রিকেট সম্পর্কে জানুন - এভাবেই অ্যাংকর ট্য়াগ অর্থাৎ ট্যাগ ক্লিকযোগ্য টেক্সট দিয়ে লিংক তৈরি করতে হয়।
মন্তব্য করুন