গাড়ি চালাতে টায়ার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অনেক সময়ই এই টায়ার পরিত্যক্ত হলে আর ব্যবহার করা যায় না। ফলে এই টায়ার অযত্নেই পড়ে থাকে। পরিত্যক্ত এই টায়ারের কারণে অনেক সময়ই পরিবেশের ভীষণ রকমের ক্ষতি হয়। কেননা এই টায়ার সাধারণত তৈরি করা হয় শক্ত রাবারের সাহায্যে।
তবে এখন প্রযুক্তি আমাদের ভিন্ন এক জগতে নিয়ে গেছে। পরিত্যক্ত এই টায়ারকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা ধরনের পণ্য। তৈরি হচ্ছে টেনিস বলও।
সম্প্রতি একদল আবিষ্কারক পরিত্যক্ত টায়ার দিয়ে টেনিস বল বানিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন। এর ভিডিওতে দেখা যায়, রাবারের সেই টায়ারকে এক অভিনব পদ্ধতিতে গলিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেই গলিত টায়ার দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে চমৎকার টেনিস বল!
প্রথমেই পরিত্যক্ত টায়ারগুলোকে একটি গোল চাকতির মতো মেশিনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ঘূর্ণায়মান সেই মেশিনে টায়ারগুলোকে সেট করে দিলেই সেগুলো ভেঙে টুকরো হয়ে ছোট ছোট আকারে পরিণত হয়। এরপর সবগুলো একত্র করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। পরে সেগুলো নিখুঁতভাবে কেটে দুটি অংশ জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হয় বল। বাইরের আবরণটি ঐতিহ্যগত ফাইবার দিয়ে তৈরি হয়, যা বলের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং খেলতে আরামদায়ক করে।
টেনিস বল সাধারণত রাবার এবং ফাইবার দিয়ে তৈরি হয়, যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয়। তবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং পুনর্ব্যবহারের ধারণা জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, পুরোনো টায়ার থেকে টেনিস বল তৈরি করার এই নতুন উদ্যোগ চালু হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর লাখ লাখ টন পুরোনো টায়ার বাতিল হয়, যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। এগুলো প্রকৃতিতে সহজে নষ্ট হয় না এবং জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসব টায়ারকে পুনর্ব্যবহার করে টেনিস বল তৈরি করার প্রকল্প পরিবেশ রক্ষার এক অভিনব পদ্ধতি। এর ফলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা হলো-
১. বর্জ্য কমানো : পুরোনো টায়ার পুনর্ব্যবহার করে পরিবেশে জমে থাকা বর্জ্যের পরিমাণ কমানো সম্ভব। ২. উচ্চ টেকসই পণ্য : টায়ারের রাবার অত্যন্ত শক্ত এবং টেকসই, যা টেনিস বলের স্থায়িত্ব বাড়ায়। ৩. কার্বন নিঃসরণ হ্রাস : নতুন উপকরণ ব্যবহার না করে পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব।
পুনর্ব্যবহৃত রাবার থেকে তৈরি টেনিস বল বাজারের প্রচলিত টেনিস বলের চেয়ে কিছুটা বেশি ভারী হতে পারে। তবে এই বলগুলো শক্তিশালী এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারযোগ্য, যা খেলোয়াড়দের জন্য একটি সুবিধা। এই উদ্যোগটি স্থানীয় শিল্পীদের এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এর পাশাপাশি টেনিস বলের উৎপাদন খরচ কমিয়ে এর বাজারমূল্যও কমানো সম্ভব।
পুরোনো টায়ার থেকে টেনিস বল তৈরি একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ধরনের প্রকল্প আরও সম্প্রসারণ করলে ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশগত সমস্যার সমাধানও সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন