দিনকে দিন বিশ্বব্যাপী ছোট হয়ে আসছে মাছের আকার। এর ফলে বর্তমানে যেসব দীর্ঘাকৃতির মাছ সাগরে পাওয়া যাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো তেমনটি আর পাওয়া যাবে না। বিশ্বজুড়ে মাছের আবাসস্থল নিয়ে এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এমন চমক জাগানিয়া তথ্য উঠে এসেছে। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওই বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিস্তারিত জানিয়েছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে মাছ সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় প্রজাতি। এদের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র গবি ও জেব্রাফিশ থেকে শুরু করে বিশালাকার টুনা, তিমি ও হাঙর। মাছের মাধ্যমে অত্যাবশ্যক খাদ্য সরবরাহ হয় বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের। স্বাভাবিকভাবেই মাছ জলজ বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই গুরুত্বপূর্ণ অংশটিই বিশ্বজুড়ে এখন হুমকির মুখে।
বিশ্বজুড়ে মাছের আবাসস্থল নিয়ে পরিচালিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর উল্লেখযোগ্যহারে প্রভাব ফেলছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এর ফলে ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে উষ্ণ হয়ে আসছে মাছের আবাসস্থল। আর এতে দিনকে দিন ছোট হয়ে আসছে মাছের আকার। বলা হচ্ছে, গত ৪০ বছরে উত্তর সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক মাছের প্রজাতি আকারে ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কারণ এই সময়ে সেখানে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের ওপর উষ্ণ জল অত্যন্ত খারাপ ধরনের প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে, বড় মাছের ক্ষেত্রে এই প্রভাব খুবই উল্লেখযোগ্য। বড় মাছ আকারে ছোট হয়ে গেলে দ্রুত পরিপক্ব হয় এবং অল্প বয়সে প্রজননে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে আকারে ছোট হতে থাকে মাছের পরবর্তী প্রজন্ম।
তাড়াতাড়ি পরিপক্ব হওয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি মাছের বর্তমান থেকে নতুন প্রজন্মে স্থানান্তরিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, এটি ‘মৎস্য-প্ররোচিত বিবর্তন‘ নামে পরিচিত। এর ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাছ আকারে হ্রাস পেতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের নদীতে বেশ কয়েকটি মাছের প্রজাতি কয়েক দশক ধরে আকারে হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মাছের আবাসস্থলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় এই প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ছোট মাছ আনুপাতিকভাবে কম সন্তান উৎপাদন করে। মাছের আকার ছোট হওয়ার অর্থ হলো প্রতিটি মাছের কম সন্তান হবে এবং বেশি বেশি মাছ ধরা পড়বে। পরিবেশগত এবং বাণিজ্যিকভাবে এই প্রক্রিয়ার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং তা সরাসরি আঘাত করবে মানবজাতিকে।
মন্তব্য করুন