বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। বনের প্রাণী বনেই মানায়, চিড়িয়াখানার নয়। কিন্তু জঙ্গলে গিয়ে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অনেকেরই বন্যপ্রাণী দেখা হয়ে ওঠে না। তাই মানুষের প্রদর্শনীর জন্য এসব প্রাণী চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। চার দেয়ালের ঘরে সঙ্গীবিহীন কিছুই করার থাকে না এসব প্রাণীর। তাই হয়তো অবসর সময় কাটাতে কাটাতে নিজের পরিচর্যাই শিখে নিয়েছে একটি শিম্পাঞ্জি।
বসে বসে নিজের হাত-পায়ের নখের যত্ন নিচ্ছে একটি শিম্পাঞ্জি। সে ইরকুতস্ক চিড়িয়াখানার বাসিন্দা। চিড়িয়াখানার কর্মীরা শিম্পাজিটিকে লেয়লা বলে ডাকে। হাতের কাছে নেইল ফাইল পেয়ে এত নিখুঁতভাবে নিজের যত্ন নিচ্ছে লেয়লা, তা দেখে চিড়িয়াখানার কর্মীরাও অবাক হয়ে গেছে। চিড়িয়াখানার প্রাণীদের খেলার জন্য মাঝে-মধ্যে ভাঙা জিনিসপত্র দেয় সেখানকার কর্মীরা।
কিন্তু লেয়লা একটি নেইল ফাইল পাওয়ার পরই যেন সে মানুষের মতো আচরণ শুরু করে। চিড়িয়াখানার পরিচালক লিউদমিলা ইভুশিকানা বলছিলেন, নেইল ফাইলটি হাতে পেয়েই লেয়লা বুঝে গিয়েছিল কী করতে হবে তাকে। নেইল ফাইলটি কিভাবে কাজে লাগাতে হয়, তা করে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন ইভুশিকানা। কিন্তু লেয়লা সেটি দেয়নি। উল্টো সে নিজে নিজেই নখের যত্ন নিতে শুরু করে।
নিবিড় মনে নখের যত্ন নিতে দেখা যায় লেয়লাকে। অথচ তাকে নখের যত্ন নেওয়া শেখায়নি কেউ। এমনকি তার সামনে কেউ নখের যত্নও করেনি। তাহলে লেয়লা এত কিছু শিখল কিভাবে? ইভুশিকানার ভাষায়, চিড়িয়াখানায় আসার আগে হয়ত সে এগুলো শিখেছে। সে মানুষকে দেখতে ভালোবাসে। তাদের চালচলন অনুকরণ করতেও পছন্দ করে। লেয়লা আগে সার্কাসে ছিল, এছাড়া তার অতীত নিয়ে তেমন কিছু জানা নেই ইভুশিকানার।
সার্কাসে লেয়লাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শিম্পাঞ্জিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় না। বরং এটিকে শেখানো যায়। সে যা করতে চায় তার বাইরে তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। তাই সার্কাসে ভালো করেনি লেয়লা। তখন তাকে বিক্রি করে দেয় সার্কাসের লোকজন। এভাবে লেয়লাকে কিনে নেয় ইরকুতস্ক চিড়িয়াখানা। ইভুশিকানা বলছিলেন, লেয়লার মর্জির কোনো ঠিক নেই। কখনও ভালো তো আবার কখনও রাগারাগি শুরু।
৬-৭ বছর বয়সে লেয়লাকে কিনে নিয়েছিল ইরকুতস্ক চিড়িয়াখানা। গেল বছর তার ১৩তম জন্মদিন পালন করে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ। শান্ত স্বভাবের লেয়লা রেগে লেগে নাকি সিনেমার কিং কংয়ের মতো হয়ে যায়। তখন সামনে যা পায় তা ভেঙে চুড়মার করে ফেলে। তবে আবার দ্রুত শান্তও হয়ে যায় সে।
মন্তব্য করুন