হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, বিপদে আছেন আপনিও। সাধারণত প্রেমের সম্পর্ক আমাদের জীবনের একটি বিশেষ অংশ হয়ে ওঠে, কিন্তু যখন পুরো জীবন এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে চারপাশ ঘুরতে শুরু করে, তখন অন্য সবকিছু আড়ালে চলে যেতে পারে।
যদি আপনার রোমান্টিক সঙ্গী থাকে, হয়তো আপনি লক্ষ্য করেছেন, একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আপনার পরিবার, বন্ধু কিংবা আত্মীয়দের সঙ্গে সময় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে, আপনার জীবন রোমান্টিক সম্পর্কের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে এবং অন্যান্য সম্পর্কের গুরুত্ব কমে যেতে পারে।
অন্যদিকে, যদি আপনার রোমান্টিক সঙ্গী না থাকে, তবে আপনি দেখবেন যে আপনার বন্ধুরা তাদের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মগ্ন হয়ে গেছে এবং তাদের সঙ্গে দেখা করা বা আড্ডা দেওয়ার সময় আপনার হাতে থাকে না। ফলে আপনি অনুভব করতে পারেন, এত বন্ধু থাকার পরেও আপনি একা।
বিশ্ববিদ্যালয় অব হেলসিংকির সমাজবিজ্ঞানী কাইসা কুর্ন ২০১২ সালে ফিনল্যান্ডের প্রাপ্তবয়স্কদের সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা করেন। তার গবেষণায় দেখা যায়, যারা রোমান্টিক সঙ্গীর সঙ্গে বাস করেন, তাদের জীবন একে অপরকে কেন্দ্র করেই চলে।
তারা যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন সম্পর্কটি তারা সবচেয়ে কাছের মনে করেন, তখন তারা তাদের রোমান্টিক সঙ্গী বা সন্তানদের সাথে সম্পর্কের কথাই উল্লেখ করেছেন। এর মানে হলো, বাইরের সম্পর্কগুলো তাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারেনি।
কুর্নের গবেষণায় যে প্রবণতা দেখা গেছে, তা শুধু হেলসিংকিতে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী একই ধরনের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর ফলে বোঝা যায়, মানুষ যখন রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে ডুবে যায়, তখন তাদের জীবন থেকে অন্য সম্পর্কগুলো অনেকটা দূরে চলে যায়।
তবে কিছু গবেষণার মতে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সঙ্গীর সঙ্গে একত্রে সময় কাটালে সম্পর্কের মধ্যে সুখী অনুভূতি তৈরি হয় (যদিও এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে)। কিন্তু দিনের সেই সময়টা, যেটা আপনি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে কাটাচ্ছেন, তা আপনি অন্য সম্পর্কগুলোতে দিতে পারছেন না। এমনকি আপনার একান্ত মুহূর্তগুলোও সঙ্গীর সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয়, যা আপনার ব্যক্তিগত জীবনকে সংকুচিত করে ফেলে।
এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—জীবন আর প্রেমের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য থাকা। যদি পুরো জীবন শুধু প্রেমের সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়, তবে আপনি বাকি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন। একে অপরের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা বা শুধু একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানো একঘেয়ে হয়ে উঠতে পারে। তাই, সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে বিভিন্ন সম্পর্কের বিকল্প রূপ তৈরি হচ্ছে, যেমন ওপেন রিলেশনশিপ, একত্রে আলাদা বাস করা (দুই সঙ্গীর আলাদা স্থানে বাস), কম্যুনাল লিভিং ইত্যাদি। এই পরিবর্তনের মধ্যে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সম্পর্কের ভারসাম্য আরও জটিল হয়ে উঠছে, তবে এর ফলে মানুষের স্বাধীনতা এবং স্বাতন্ত্র্য বেড়েছে।
অন্যদিকে, যারা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন, তারা যদি সঠিক ভারসাম্য বজায় না রাখতে পারেন, তবে তারা জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি, অনেক সময় সঙ্গীকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া মানে সম্পর্কের জন্য ভালো না হওয়া।
গবেষণা বলছে যে, সিঙ্গেলদের তুলনায় বিবাহিত মানুষরা তাদের বন্ধু, ভাই-বোন, মা-বাবা, প্রতিবেশী থেকে বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং এই বিচ্ছিন্নতা তাদেরকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অসহায় অবস্থায় ফেলে দিতে পারে।
এভাবে, আপনার সঙ্গী আপনার আবেগীয় সমর্থন হতে পারে, কিন্তু একমাত্র সঙ্গী নয়। আপনি বন্ধুদের সঙ্গে কোনো সমস্যার কথা বলতে পারেন, ভাই-বোনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি সব ধরনের আবেগীয় সমর্থন একমাত্র সঙ্গীর কাছে আশা করেন, তবে সঙ্গী সম্পর্ক ছেদ হলে আপনি উপযুক্ত সমর্থন খুঁজে পাবেন না।
জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রয়োজন নয়, সম্পর্কের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি আপনার সঙ্গীকে অন্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেন, তখন আপনি তাকে নতুনভাবে জানতে পারবেন। সঙ্গীকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা এবং সম্পর্কের মধ্যে নতুন মাত্রা আনা একটি সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণ।
শেষে, প্রেম এবং জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনার সবচেয়ে বড় বাধা হলো সময়। সবার কাছে সময় থাকে না, বিশেষ করে যদি আপনার চাকরি বা সন্তান থাকে, তখন সময় আরও সংকীর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনি ভাগাভাগি করার সংস্কৃতি ধারণ করেন এবং সম্পর্কের যত্ন নেন, তবে তা সব ধরনের সম্পর্কের জন্য উপকারী হবে।
সূত্র : ফেইথ হিল, দ্যা আটলান্টিক
মন্তব্য করুন