নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে একটি অদ্ভুত এবং নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে, যা শুধু শিহরণ জাগায়নি, পুরো পৃথিবীকে বিস্মিত করে দিয়েছে। গত সপ্তাহে একটি সাধারণ কলা, যা ধূসর স্কচটেপ দিয়ে দেয়ালে সেঁটে রাখা ছিল, বিক্রি হয়েছে ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৪ কোটি টাকায়! এর পেছনে যে গল্পটি রয়েছে, তা রীতিমতো কল্পনাকেও হার মানায়।
যে কলাটি ৭৪ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই কলাটি কিনেছিলেন এক চীনা বংশোদ্ভূত ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায়ী যার নাম জাস্টিন মুন। কিন্তু এই অবিশ্বাস্য কলাটি যিনি বিক্রি করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশি ফল ব্যবসায়ী শাহ আলম। যিনি মাত্র ৩৫ সেন্ট (বাংলাদেশি ৪২ টাকা) দিয়ে কলাটি বিক্রি করেছিলেন। অবিশ্বাস্য নয়? তবে আরও অবাক করার মতো বিষয় হলো, কলাটির এই বিক্রির পর শাহ আলমের জীবন পালটে গেছে; অথচ শুরুতে এটা ছিল তার ছোট একটি দোকানের সাধারণ একটি কলা!
কলার ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত বিক্রি এই কলার ‘বিক্রির কাহিনি’ যদি কোনো চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট হতো, তবে সবাই মনে করত এটি অতিরঞ্জিত। কলাটির কোনো বিশেষ গুণ ছিল না। ছিল না কোনো নকশা, ছিল না কোনো রং বা অন্য কিছু। কিন্তু ছিল এক অদ্ভুত এবং আন্ডারস্টেটেড ‘কনসেপ্ট’। একটি কলা, যা স্কচটেপ দিয়ে দেয়ালে সেঁটে রাখা হয়েছে। এই কনসেপ্টই তাকে বিশ্বের অন্যতম দামি শিল্পকর্মে পরিণত করেছে।
এদিকে শাহ আলম, যিনি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন, তার অবস্থা ছিল সাধারণ। তার ছোট্ট ফলের দোকানে তিনি কাজ করতেন, আর তার ব্যবসাও ছিল অনেকটাই সংকটে। তবে একদিন, এই ‘অদ্ভুত কলাটি’ বদলে দিল তার ভাগ্য। তিনি যখন জানলেন যে তার ৪২ টাকার কলাটি ৭৪ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, তিনি হতবাক হয়ে যান। কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমি কখনো এত টাকা দেখিনি। এ যেন এক স্বপ্ন!
জাস্টিন সানের উদ্যোগ : ১ লাখ কলার অর্ডার এ ঘটনায় যেমন শিল্পবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা যায় যে, জাস্টিন সান তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। একে অন্যভাবে ভাবলে, এটি যেন এক সিনেমার রূপকল্প কলার অর্ডারের আড়ালে মানবিকতার গভীর বার্তা। জাস্টিন সান, যিনি বিশ্বের একজন শীর্ষ ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোক্তা, তার অভিনব পদক্ষেপে শাহ আলমের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
জাস্টিন সান ঘোষণা করেছেন, তিনি শাহ আলমের দোকান থেকে ১ লাখ কলা কিনবেন এবং সেগুলো বিশ্বব্যাপী বিনামূল্যে বিতরণ করবেন! এটা শুধু একটি কলার ঘটনা নয়, এটি একটি মানবিক উদ্যোগ, বলেছেন সান।
এক্স (পূর্বে টুইটার) প্ল্যাটফর্মে তিনি লেখেন, ‘শাহ আলমকে ধন্যবাদ জানাতে আমি তার দোকান থেকে ১ লাখ কলা কিনব। এগুলো সারা পৃথিবীজুড়ে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। যে কোনো বৈধ আইডি কার্ড দেখিয়ে মানুষ এসব কলা সংগ্রহ করতে পারবে।
এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শাহ আলমের ছোট্ট দোকানটি এখন বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। তার ব্যবসায়িক সফলতা শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবে ও বিশ্বব্যাপী একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছে।
গোফান্ড মি অ্যাকাউন্ট : শাহ আলমের নতুন জীবন এদিকে, শাহ আলমের জীবনে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। তার জন্য একটি গোফান্ড মি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ অর্থ তার ব্যবসা ও পরিবারকে সহায়তা করবে এবং তাকে আরও বড় সাফল্য অর্জনে সহায়ক হবে।
এই ঘটনা, যা প্রাথমিকভাবে একটি সাধারণ কলা ছিল, শিল্পবিশ্বে এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। এটি যেমন একটা আধুনিক শিল্পকর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কখনো কখনো অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক কিছুই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্য সৃষ্টি করতে পারে। শিল্পের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, এটি কেবল চিন্তা এবং দর্শনের বিষয়।
এ ঘটনার মাধ্যমে যে এক ধরনের শিল্প, ব্যবসা এবং মানবিকতা একসাথে মিলেছে, তা প্রকৃতপক্ষে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জাস্টিন সান যেমন শাহ আলমের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি সারা বিশ্ব তার জন্য এক নতুন সম্মান ও সহানুভূতির বার্তা পাঠিয়েছে। এ ঘটনা প্রমাণ করেছে, যে কিছু অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক ঘটনা কখনো কখনো পৃথিবীকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শেখায়।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
মন্তব্য করুন