কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়েও আলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন এক নারী। তাকে কুমির আক্রমণ করে পানিতে টেনে নিয়ে যায়। এরপর দেড় ঘণ্টা লড়াই শেষে প্রণে বেঁচে ফিরেছেন ওই নারী।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম কালিমান্তান প্রদেশের কেতাপাংয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। কুমিরের আক্রমণের শিকার ওই নারীর নাম ফালমিরা ডি জেসুস। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মারাত্মক আহত হয়েছেন। খবর ডেইলি মেইলের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ জুলাই ওই নারী কুমিরের আক্রমণের শিকার হন। তিনি স্থানীয় পাম বাগানে কাজ করছিলেন। তখন একটি খালে পানি আনতে গেলে কুমির তাকে আক্রমণ করে পানিতে টেনে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করেন ও কুমিরের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। পরে তার সহকর্মীরা এগিয়ে আসে।
আরও পড়ুন : কুমিরকে বিয়ে করে চুমু খেলেন মেক্সিকোর মেয়র
এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ওই নারী সহকর্মীদের এগিয়ে দেওয়া একটি লাঠি আকড়ে ধরে আছেন। কুমিরটি তাকে পানির গভীরে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় অন্যরা কুমিরটিকে সরাতে লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করছেন। তবে ভয়ে কেউ পানিতে নামার সাহস করেননি।
ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে ফালমিরা বলেন, যেখানে কুমির কামড়ে ধরেছিল সেখানে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করছিলাম। কোনোভাবেই নিজেকে মুক্ত করতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে নিজেকে খুব দুর্বল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমি মারা যাচ্ছি। কারণ আমি তখন ধীরে ধীরে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছিলাম।
সহকর্মীরা জানান, ফালমিরা প্রায় ৯০ মিনিট কুমিরের সঙ্গে লড়াই করেন। তবে সেখানে পানি কিছুটা কম ছিল। ধীরে ধীরে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ফলে কুমির তাকে ছেড়ে দেয়। এ সময় কয়েকজন নারী পানিতে নেমে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না ফলমিরা। তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে শুয়েও যেন কুমিরটিকে দেখেতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে ওটা এখনো আমার শরীর আকড়ে ধরে আছে। এ সময় তাকে উদ্ধারে সহায়তা করা সকলের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- তার ডান বাহু, উরু ও পায়ের নিচের অংশে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তার সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। কুমিরের আক্রমণ থেকে ফিরে আসাকে আলৌকিকভাবে দেখছেন চিকিৎসকেরা।
ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ বাহিনী বাগানটিতে কাজ করা ও ওই এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া তারা ফালমিরার এ লড়াই ও উদ্ধারে সহায়তাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ায় বেশ কয়েক জাতের কুমির বাস করে। ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে কুমিরের খাবার কমে যাচ্ছে। ফলে কুমির ক্রমেই বসতির দিকে আসছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় পাম বাগান তৈরির কারণে বসবাসের স্থানও হারাচ্ছে কুমির। ফলে আক্রমণ বাড়ছে।
মন্তব্য করুন