২০১৮ সালে দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন প্রাণচঞ্চল ঝুমা আক্তার। সে সময়ই একটি দুর্ঘটনায় চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। পা পিছলে লিচু গাছ থেকে পড়ে গিয়ে স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পান তিনি। এতে হাঁটা-চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এরপর ৭ মাস আর বিছানা থেকে উঠতে পারেননি। কোমরের নীচ থেকে একেবারে অবসর হয়ে যায়।
এরপরও ঝুমাকে দমানো যায়নি। একবছরের মাথায় সাভারের সিআরপিতে ভর্তি হন তিনি। তিন মাস সিআরপিতেই থাকতে হয়। এরই মধ্যে তিনি এসএসসি পাশ করেন। বিয়েও করেন। স্বামী মনির হোসেন পুলিশে চাকরি করতেন। এক সড়ক দূর্ঘটনায় তিনিও পঙ্গু হয়ে চাকুরি হারান। স্বামী স্ত্রী দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বিয়ের পর ঝুমা ভর্তি হন শিবপুর শহীদ আসাদ সরকারি কলেজে। পাশ করেন এইচএসসি। অনার্সে ভর্তি হন সাভারে।
সেখানে প্রথম তিনি হুইল চেয়ারে বাস্কেটবল খেলা শুরু করেন, এরপর বাংলাদেশে প্যারা আর্চারি শুরু হলে ঝুমা নাম লেখান আর্চারিতেও। সে খেলাতেই ইতিহাস গড়েছেন এ তরুণী। দেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছেন প্যারা অলিম্পিকে খেলার। এ বছর প্যারিসে মূল অলিম্পিকের পরপরই হবে প্যারা অলিম্পিকের আসর।
বাংলাদেশের প্যারা আর্চারির সদস্য ঝুমা শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে আরব আমিরাত থেকে দেশের পথে রওনা হয়েছেন। প্যারা অলিম্পিকের চুড়ান্ত কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে সরাসরি অলিম্পিকের টিকিট পেয়েছেন ঝুমা।
মেয়েদের কম্পাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের তেরেসা ওয়ালেসকে ১৩৮-১৩৪ পয়েন্টে হারিয়ে জেতেন ঝুমা। তাতেই সম্ভাবনা জেগেছিল কোটা পাওয়ার।
বাংলাদেশে প্যারা আর্চারি শুরু হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। গত বছর প্যারা এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণের পর মাত্র দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে যান আর্চাররা। সেখানেই পদক জিতে ঝুমার এই অর্জন। নিজের স্কোর নিয়ে ঝুমাও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
ঝুমার মা জানান, ঝুমার এ বিশ্বজয়ে পরিবারে পাশাপাশি নরসিংদী জেলার মানুষ খুশি। ছোট সময় সে খুবই চজ্ঞল প্রকৃতির মেয়ে ছিল। খেলাধুলা অনেক পছন্দ ছিল তার। লেখাপড়ায়ও সে খুব ভাল ছিল। স্কুলের সহপাঠীদের সাথে সবসময়ই খেলাধুলায় মগ্ন থাকতো সে। স্কুল থেকে অনেকবার খেলাধুলা করে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাবো ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের রতন মিয়ার মেয়ে ঝুমা। মা গৃহিনী সুফিয়া বেগম। ঝুমারা তিন বোন। সে সবার ছোট।
মন্তব্য করুন