ইসরায়েলের নৃশংসতায় প্রতিদিনিই হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে লাখ লাখ মানুষ। তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সাহায্য ও অনান্য সুযোগ সুবিধা। তাই ফিলিস্তিনি অবরুদ্ধ মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্য মাথায় নিয়ে অনুদান সংগ্রহ করছে অনেকে। ফিলিস্তিনের পাশের দেশ মিসরও অবরুদ্ধ গাজাবাসীর সাহায্যের জন্য অনুদান সংগ্রহ করছে। সেই লক্ষ্যে শুক্রবার দেশটির মাদির ওয়াদি দেগলা রিজার্ভ থেকে ‘গাজার জন্য দৌড়’ নামক ম্যারাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
মিসরের উপজাতি ও পরিবার পরিষদ, পরিবেশমন্ত্রী ইয়াসমিন ফুয়াদ এবং যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর সহায়তায় ‘গাজায় আমাদের মানুষের সঙ্গে সংহতি’ শিরোনামে আয়োজিত ম্যারাথনটি মিসরের সামাজিক সংহতি মন্ত্রী নেভিন আল-কাব্বাজ উদ্বোধন করেন। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান নেভিন। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে আমরা পশ্চিমাদের মানবাধিকার প্রয়োগের দ্বৈত রূপ এড়িয়ে চলার জন্য আমরা সমগ্র বিশ্বের কাছে আবেদন জানাই। ফিলিস্তিনের মানুষদের আপনারা বাঁচান।’
নেভিন আরও বলেন, ‘মানবাধিকার যে মাত্রায় নষ্ট হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলো সাহসিকতার সঙ্গে যেভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে তা দেখেও পশ্চিমাদের চুপ থাকা লজ্জাজনক।’
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক সংহতি মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয় এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ফিলিস্তিন এবং গাজা উপত্যকাকে সমর্থন করা। বিবৃতিতে আরও যোগ করা হয় যে গাজা উপত্যকার জনগণকে সাহায্য করার জন্য অনুদান সংগ্রহ করার লক্ষ্যই মূল উদ্দেশ্য। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সের প্রায় ১০ হাজার অংশগ্রহণকারী স্বতস্ফূর্তভাবে একত্রিত হয়েছিল।
ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণকারীদের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করা হয়। এ ছাড়াও ইভেন্টটিতে সংগ্রহ করা অনুদানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৫০ ট্রাক সমন্বিত একটি খাদ্য কনভয় সজ্জিত করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়ে গিয়েছে।
মিসর ইতোমধ্যেই গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের প্রায় দুই লক্ষ্য টন মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে এবং স্থল, সমুদ্র বা আকাশপথের মাধ্যমে সাহায্য পাঠানো হয়েছে। আল কাব্বাজ আরও বলেন, গাজা উপত্যকায় মিসরের দেওয়া সহায়তার ষাট শতাংশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনিরা বুঝে পেয়েছে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া রানাররাও ফিলিস্তিনকে সাহায্য করতে পেরে খুব খুশি। এর মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি গাজাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, যখনই আমি এই ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি আমি এটার সদ্ব্যবহার করেছি এবং সেখানে (গাজায়) আমাদের ভাইদের কাছে আমার সাহায্য পাঠানোর জন্য অংশ নিয়েছিলাম।’
অন্য আরেক প্রতিযোগী বলেন আমরা এখানে আমাদের টাকা দিয়ে এবং আমাদের আনন্দে গাজার লোকেদের সাহায্য করতে এসেছি। এটা ভালো। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। গাজার জন্য দৌড়াও। আমি খুব খুশি।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পঞ্চম মাসে গাজায় লড়াই অব্যাহত রয়েছে। হামাস ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি নজিরবিহীন আক্রমণ করে। যাতে ১.১৩৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক ছিল এবং অপহরণ হয় ইসরায়েলি কর্মকর্তা সহ ২৪০ জনের মতো। ইসরায়েল পরে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং গাজাকে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ করে বড় আকারের বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলি নেতারা হামাসকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে স্থল আক্রমণ শুরু হয়। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে প্রকাশের সময় অন্তত ২৮,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
মন্তব্য করুন