২০২৩ সালে ক্রিকেট, ফুটবল বাদ দিয়ে অ্যাথলেটিকস, হকি কিংবা কাবাডি—দেশের অন্যান্য খেলায় নজর দিলে চোখে পড়বে শুধুই ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার ভিড়ে আলাদা ইমরানুর রহমান। এ ছাড়া ক্রিকেটে পুরুষ ও নারী দলের দুই ব্রোঞ্জ, কোনো রকমে মান বাঁচায় এশিয়ান গেমসে। আর এশিয়ান আর্চারিতে স্বর্ণ এনে দেন আহমেদ হাকিম ও দিয়া সিদ্দিকী। এসব নিয়ে থাকছে দেশের অন্যান্য খেলাগুলোর সালতামামি—
আলো ছড়ায় ইমরানুর এশিয়ানের শীর্ষ স্তরে অ্যাথলেটিকসে এর আগে কখনও স্বর্ণ জেতায় হয়নি বাংলাদেশের। এ বছর সেই আক্ষেপ দূর করেন দেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান। ফেব্রুয়ারিতে কাজাখস্তানে এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতে ইতিহাস এই অ্যাথলেট।
বিশ্বমঞ্চেও আলো ছড়ান ইমরানুর। আগস্টে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিটে প্রথম হন। তবে সেমিতে উঠতে ব্যর্থ হন তিনি। পরের মাসেই হাংজু এশিয়ান গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেমিতে উঠেছিলেন ইমরানুর।
আর্চারিতে একমাত্র স্বর্ণ গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশের আর্চারি। মার্চে থাইল্যান্ডের ফুকেটে এশিয়ান আর্চারিতে রিকার্ভের মিশ্র দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ জেতেন হাকিম আহমেদ ও দিয়া সিদ্দিকী জুটি। এ বছর এটি ছিল আর্চারির সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই প্রতিযোগিতায় আরও দুটি পদক আসে।
রোমান সানার প্রত্যার্বতন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এ বছর আর্চারিতে ফেরেন রোমান সানা। ২০২২ সালের নভেম্বরে এক অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পরে ক্ষমা চেয়ে মুক্ত হন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে। মার্চে ফিরে স্বাধীনতা দিবস আর্চারিতে জেতেন স্বর্ণ। এ বছর জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন আর্চারির সতীর্থ দিয়া সিদ্দিকীকে।
বক্সিংয়ে নতুন আশা এশিয়ান গেমসে আশা জাগিয়ে ছিলেন বক্সার সেলিম হোসেন। শ্রীলঙ্কা ও তাজিকিস্তানের প্রতিযোগীকে হারিয়ে পৌঁছে যান পদকের লড়াইয়ে। তবে জাপানের প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে শেষ হয় তার অভিযান।
এশিয়ান গেমসে শুধুই হতাশা এশিয়াডে ভরাডুবি হয়েছে প্রায় সব খেলাতেই। আগের বারের ষষ্ঠ স্থান হারিয়ে এবার অষ্টম হয়েছে হকি। তবে মান বাঁচিয়েছে ক্রিকেট। প্রথমে পাকিস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্চ জেতে নারী দল। পরে পুরুষ ক্রিকেট দলও পাকিস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে। হাংজু এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের অর্জন এই দুটি ব্রোঞ্জই।
বেহাল দশা জাতীয় খেলার এ বছর জাতীয় খেলা কাবাডির অবস্থাও ভালো ছিল না। ২০১০ সালের পর এশিয়ান গেমসে পদক জেতা হয়নি। এবার হাংজুতেও ব্যর্থ। পদকের জয়ে কথা জানিয়েও শূন্য হাতে ফেরে পুরুষ দল। আর পাঁচ দলের মধ্যে চতুর্থ হয় নারী কাবাডি দল।
তলানিতে শুটিং ও দাবা বছরজুড়েই ব্যর্থ শুটিং। আন্তর্জাতিক কোনো ইভেন্টের ফাইনালের আশপাশেও যেতে পারেননি শুটাররা। দিল্লিতে বিশ্বকাপ শুটিংয়ে ৩৫ শুটারের মধ্যে অর্ণব হয়েছেন ২৬তম। দাবাতেও একই চিত্র। এ বছর গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার হওয়ার লক্ষ্যে একের পর এক টুর্নামেন্ট খেলেছেন ফাহাদ রহমান। চার টুর্নামেন্টে খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত আর পারে উঠেননি তিনি।
যুব গেমস এ বছর শুরু হয় শেখ কামাল যুব গেমস দিয়ে। অনূর্ধ্ব-১৭ বয়সী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে বেশ বড় পরিসরেই হয় এই প্রতিযোগিতা। তিন ধাপে আয়োজিত এই গেমসে ২৪ খেলায় অংশ নেন ২৫ হাজারের বেশি প্রতিযোগী।
অনেক কিছু নেই আর নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে দেশের অন্যান্য খেলাগুলো। সাঁতার, ভারোত্তোলনের মতো খেলাগুলোর সঙ্গী হয় সেই হতাশাই।
মন্তব্য করুন