ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বুঁদ হয়ে থাকা অ্যাথলেটিকস কর্মকর্তারা হয়তো ইভেন্টের নির্ধারিত সময়টা ভুলেই গিয়েছিলেন। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রতিযোগীরা ওয়ার্মআপের পর স্টার্টিং বক্সে বসছেন, হাঁটছেন—অপেক্ষা আর শেষ হয় না! ইভেন্টের জন্য নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিটের বেশি গড়িয়ে যাওয়ার পর শুরু হলো কাঙ্ক্ষিত ইভেন্ট।
দেশ বদলে গেছে, বদলে গেছে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বললেন, ক্রীড়াঙ্গনও না কি বদলে গেছে। যাদের ঘিরে আয়োজন, তাদের উপেক্ষা করে তোষামোদের সংস্কৃতিটা কিন্তু বদলায়নি! জাতীয় অ্যাথলেটিকসের উদ্বোধনী দিনের প্রধান আকর্ষণ ছিল ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। পুরুষ ও নারী বিভাগের আকর্ষণীয় এ ইভেন্ট ছাপিয়ে অ্যাথলেটিকস নিয়ন্তাদের ফোকাস অবশ্য ভিন্নদিকে ছিল। তাতে স্প্রিন্টার, তাদের কোচরা বিরক্ত হয়েছেন বটে। কিন্তু বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে বিরক্তি প্রকাশ করাও তো দায়!
অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব শেষে ট্র্যাকে উজ্জ্বল হয়ে উঠল বাংলাদেশ নৌবাহিনী। দ্রুততম মানব হলেন মোহাম্মদ ইসমাইল, মানবী সেই শিরিন আক্তার। শুধু দ্রুততম মানব-মানবী নয়, তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিলেন একই সংস্থার স্প্রিন্টার—পুরুষ বিভাগে রাকিবুল হাসান এবং নারী বিভাগে সুমাইয়া দেওয়ান।
দ্রুততম মানব খেতাব পুনরুদ্ধারের পথে মোহাম্মদ ইসমাইলের সময় লেগেছে ১০.৬১ সেকেন্ড। রাকিবুল হাসান ১০.৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে রুপা জিতেছেন, ব্রোঞ্জজয়ী সেনাবাহিনীর জুবাইল ইসলামের টাইমিং ছিল ১০.৮৯ সেকেন্ড। দ্রুততম মানবী খেতাব ধরে রাখার পথে শিরিন আক্তারের টাইমিং ছিল ১২.০১ সেকেন্ড। রুপা জিততে সুমাইয়া দেওয়ানের টাইমিং ছিল ১২.১৫ সেকেন্ড। ব্রোঞ্জজয়ী বিকেএসপির আজমি খাতুনের টাইমিং ১২.৫০ সেকেন্ড।
বিগত চার জাতীয় আসরের টানা দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান সেনাবাহিনী ছেড়ে নৌবাহিনীতে নাম লেখালেও এ আসরে খেলছেন না। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগালেন মোহাম্মদ ইসমাইল। ১০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণজয়ের পর ট্র্যাকে বুনো উল্লাসে মাতলেন লং জাম্প ইভেন্ট দিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় আসা নৌবাহিনীর এ ক্রীড়াবিদ।
‘বিগত সরকারের আমলে ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে নিজস্ব উদ্যোগে গত সাত মাস অনুশীলন করেছি। এ সময় নিজের পেছনে অন্তত ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। মুকুট ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে সুফলও পেলাম’—ইভেন্টের পর বলছিলেন মোহাম্মদ ইসমাইল। এ নিয়ে জাতীয় আসরে মোহাম্মদ ইসমাইলের পঞ্চম ১০০ মিটার স্বর্ণপদক ছিল এটি। শিরিন আক্তার আগেই নিজেকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ক্রমেই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন এ স্প্রিন্টার। জাতীয় আসরে এ নিয়ে ১৬ বার দ্রুততম মানবীর মুকুট জিতলেন নৌবাহিনীর স্প্রিন্টার।
আসরের উদ্বোধনী দিনে পুরুষ ও নারী বিভাগের স্প্রিন্ট ছাপিয়ে গেছে রেকর্ড-বয় গোলাম সারোয়ার। পুরুষদের শর্টপুটে ১৫.৫০ মিটার ছুড়ে নিজের রেকর্ড বড় করেছেন নৌবাহিনীর এ ক্রীড়াবিদ। ২০২৪ সালের জাতীয় আসরে ১৪.৮৯ মিটার ছুড়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান। আজ রেকর্ড বড় করেও যেন অতৃপ্ত নৌবাহিনীর স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং ও স্যালভেজ ফোর্সের এ সদস্য। যশোরের ঝিকরগাছার টগবগে যুবক এখানেই থামতে চান না, নিজের রেকর্ড আরও বড় করার লক্ষ্যের কথা জানালেন।
মন্তব্য করুন