দক্ষিণ এশীয় (এসএ) গেমসে পদকজয়ী শুটার সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা ইন্তেকাল করেছেন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ২টায় মস্তিষ্কে রক্ষক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। মৃত্যুর খবরটি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সাদিয়ার বাবা সৈয়দ সারোয়ার।
ওপরের ছবিতে সর্ববামে সাদিয়া, সঙ্গী শারমিন আক্তার রত্না ও তৃপ্ত্তি দত্ত
২০১৭ সালে রান্নঘরে অগ্নি দুর্ঘটনার শিকার হন এক সময়ের অন্যতম দেশসেরা শুটার। দগ্ধ হয় শরীরের ২৫ শতাংশ। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্বাস নালিও। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে কয়েক মাসের চিকিৎসায় গায়ের ক্ষত শুকিয়েছে বটে; কিন্তু মনের ক্ষত বয়ে বেরিয়েছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত! মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় কেটেছে জীবনের শেষ সময়গুলো।
মৃত্যুর আগের অবস্থা সম্পর্কে সাদিয়ার পিতা সৈয়দ সারোয়ার কালবেলাকে বলছিলেন, ‘অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল মেয়েটা। এ সংক্রান্ত চিকিৎসাও চলছিল। সোমবার সকালে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে দ্রুতই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। দুপুর সোয়া দুইটার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
২০১০ সালের যুব অলিম্পিকের উদ্বোধনী মার্চ-পাষ্টে জাতীয় পতাকা বহন করেছেন সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা। ওই আসরের আগেই বৈশ্বিক আসরে সাফল্যর সিঁড়ি টপকেছেন। পাদপ্রদীপের আলোয় আসা ঢাকা এসএ গেমস দিয়ে। শারমিন আক্তার রত্মা ও তৃপ্তি দত্তকে নিয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন। একক ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন শারমিন আক্তার রত্না; রূপা জিতেছেন সাদিয়া সুলতানা। দিল্লি কমনওয়েলথ শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল একক ইভেন্টে রত্না রূপা জয় করেন; এ ইভেন্টে সাদিয়া সুলতানা ছিলেন পদকশূণ্য। দ্বৈত ইভেন্টে সাদিয়া-রত্না জুটির কল্যাণে ভারত ও ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশ। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ব্যাজ ইভেন্টে শারমিন আক্তার রত্না স্বর্ণ জিতেছেন, রূপা জেতেন সাদিয়া সুলতানা।
কেবল সাদিয়া নয়; সৈয়দ পরিবারের বাকি চার সদস্য জাতীয় ক্রীড়াঙ্গণে সম্পৃক্ত। সৈয়দ সালেহ মো. সাজ্জাদ উল্লাহ ২০১১ সালের জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন, তিনি বর্তমানে স্বীকৃত কোচ হিসেবে কাজ করছেন। সাজ্জাদের পথ ধরেই ক্রীড়াঙ্গনে আসেন সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা। সহোদরের মতো ব্যাডমিন্টন নয়, বেছে নেন শুটিং। সাদিয়ার দেখানো পথে শুটিংয়ে আসেন সৈয়দা সায়মা সুলতানা। অগ্রজের মতো অতোটা সমৃদ্ধ হয়নি তার ক্যারিয়ার। জাতীয় আসরে একাধিক পদক অবশ্য জিতেছেন সায়মা।
সাদিয়া-সায়মার মাধ্যমে সৈয়দ পরিবারে শুটিংয়ের যে স্রোত প্রবাহিত হয়েছে, তাতে ছেদ টানেন সৈয়দ সাকের মো. সিবগাত উল্লাহ। বড় ভাই সাজ্জাদের মতো বেছে নেন ব্যাডমিন্টন। সিবগাতের মতো এস এস এম সিফাত উল্লাহ গালিবও ব্যাডমিন্টন বেছে নিয়েছেন। খেলছেন জাতীয় ও আন্তরর্জাতিক পর্যায়ে।
মন্তব্য করুন