‘৮ কোটি’ প্রকাশ্যে আসার পরই বদলে গেছে কাবাডির দৃশ্যপট- শুরু হয় কাদা ছোড়াছুড়ি, মসনদ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। সরকার অ্যাডহক কমিটি গঠনের পরও থামেনি সেটা। কাবাডিতে কী চলছে, বাস্তব চিত্রটা কী-তা পরিষ্কার করতেই সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।
অ্যাডহক কমিটি গঠনের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগকে নিয়ে। এসএমএ মান্নান এবং আরও কিছু কাবাডি সংগঠক অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনকে চুক্তিমাফিক বছরে ৫৩ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেননি এসএম নেওয়াজ সোহাগের প্রতিষ্ঠান অ্যাড টাচ। কালবেলার পক্ষ থেকে এসএমএ মান্নানের সঙ্গে যোগযোগ করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত চুক্তির প্রমাণ অবশ্য তিনি দিতে পারেননি, ‘আমার কাছে ৫৩ লাখ টাকা সংক্রান্ত চুক্তির কাগজপত্র নেই। কাবাডি ফেডারেশনের বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হকের কাছে কাগজপত্র আছে।’ এ প্রসঙ্গে গাজী মোজাম্মেল হক কালবেলাকে বলেন, ‘কাগজপত্র আমার কাছে নেই, সেগুলো ফেডারেশনে থাকার কথা। আমি তো বর্তমানে ফেডারেশনের বাইরে। চুক্তিমাফিক ফেডারেশনকে অ্যাড টাচ নামের প্রতিষ্ঠানের অর্থ দেওয়ার কথা ছিল। আমার জানামতে সে অর্থ দেওয়া হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগ কালবেলাকে বলেছেন, ‘আমি কাবাডি ফেডারেশনের পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিলাম। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ফেডারেশনে রক্ষিত আছে। কিন্তু এখানে ৫৩ লাখ টাকার তত্ত্বটা কোথা থেকে এলো, জানি না। চুক্তিমাফিক যদি বছরে ৫৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকে, গত আট বছরে ৫৩ লাখ টাকা হিসাব করে ফেডারেশন রেখে দেওযা হোক। কোষাগারে থাকা বাকি অর্থ তো আমার প্রতিষ্ঠানের হওয়ার কথা?’
কাবাডি ক্লাবগুলো নাকি বর্তমান কমিটির কার্যক্রম বয়কট করছে। এ প্রসঙ্গে এসএম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, ‘একন-দুজন যদি বিচ্ছিন্নভাবে বলে থাকেন, সেটা সবার কথা হতে পারে না। আপনারা ক্লাবগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন। গোটা দেশের কাবাডি-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলুন- সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ অ্যাডহক কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও ক্লাব প্রতিনিধি মনির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘ক্লাবগুলো নিয়ে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর। হাতে গোনা দুয়েকজন ক্লাব কর্মকর্তার কথাকে মানদণ্ড হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিগত কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ কারণে কাবাডিকে ‘পুলিশ ফেডারেশন’ বলা হতো। বিগত দুটি কমিটির অধীনে খেলাটি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে ফেডারেশনের কোষাগারে প্রায় ৮ কোটি টাকা রয়েছে। আর্থিক সমৃদ্ধির সুফল অবশ্য ম্যাটে ফুটিয়ে তোলা যায়নি। ২০১০ সাল থেকে পুরুষ দল এবং ২০১৪ সাল থেকে নারী দল এশিয়ান গেমসে পদকশূন্য। সে শূন্যতা অবশ্য কাটাতে পারেনি বিগত কমিটি। অ্যাডহক কমিটি এখনো কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। বাংলাদেশ কাবাডির ভাগ্য কী আছে, সময়ই বলতে পারে!
মন্তব্য করুন