সেই ২০০২ সাল থেকেই ব্রাজিল তাদের ঐতিহাসিক ষষ্ঠ বিশ্বকাপ বা হেক্সা জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বরাবরের মতোই তারা ব্যর্থতার স্বাদ পেয়েছে। তবে অবশেষে ব্রাজিল তাদের পরম আকাঙ্ক্ষার হেক্সা জয় করতে পেরেছে, অবশ্য ফুটবলে নয় ফুটসালে। ফিফার ফুটসাল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপা অর্জন করেছে ব্রাজিল।
রোববার (৬ অক্টোবর) ব্রাজিল তাদের ফুটসাল আধিপত্যকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল, উজবেকিস্তানের তাশখন্দে অনুষ্ঠিত ২০২৪ ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নিয়েছে ব্রাজিল। এর মাধ্যমে, ব্রাজিল ফুটসাল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করল, এর আগে ১৯৮৯, ১৯৯২, ১৯৯৬, ২০০৮, এবং ২০১২ সালে শিরোপা জিতেছিল সেলেসাওরা।
প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আমেরিকার দুই দলের মধ্যে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাজিল শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ফেরাও ৬ মিনিটে প্রথম গোল করেন এবং রাফায়েল ১২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। আর্জেন্টিনা বারবার আক্রমণ চালালেও তাদের একমাত্র গোলটি আসে ৩৮ মিনিটে মাতিয়াস রোসার পা থেকে। শেষ দুই মিনিটে আর্জেন্টিনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, আর ব্রাজিল তাদের দৃঢ় রক্ষণ দিয়ে ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে পরাজিত করে।
উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পারফরম্যান্স ছিল অনবদ্য। ৭টি ম্যাচেই তারা জয় পেয়েছে এবং মাত্র ৬টি গোল হজম করেছে—যা তাদের ইতিহাসের সেরা রক্ষণাত্মক রেকর্ড।
এ ছাড়াও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইউক্রেন ৭-১ ব্যবধানে ফ্রান্সকে পরাজিত করে তাদের ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপে সেরা অর্জন ব্রোঞ্জ পদক জিতে। এটি ছিল ফ্রান্সের প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ, যা দেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক।
২০২৪ সালের ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপ অনেক নতুনত্বের জন্ম দিয়েছে। প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টটি মধ্য এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তাশখন্দ, আন্দিজান এবং বুখারা শহরে ১,৫০,০০০ এরও বেশি দর্শক ম্যাচ উপভোগ করেছে। এ ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ফ্রান্স প্রথমবারের মতো ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপে অংশ নেয়, যা ফুটসালের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রমাণ।
ব্যক্তিগত পুরস্কার
ব্রাজিল দলের আধিপত্য পুরস্কার বিতরণী পর্যায়েও দেখা যায়, যেখানে দলটির খেলোয়াড়রা গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করেন:
অ্যাডিডাস গোল্ডেন বল : দিয়েগো (ব্রাজিল)
অ্যাডিডাস সিলভার বল : মারলন (ব্রাজিল)
অ্যাডিডাস ব্রোঞ্জ বল : সেমেনচেঙ্কো রোস্তিস্লাভ (ইউক্রেন)
অ্যাডিডাস গোল্ডেন বুট : মার্সেল (ব্রাজিল)
অ্যাডিডাস সিলভার বুট : আবাকশিন দানিয়িল (ইউক্রেন)
অ্যাডিডাস ব্রোঞ্জ বুট : অ্যারিয়েটা কেভিন (আর্জেন্টিনা)
অ্যাডিডাস গোল্ডেন গ্লাভ: উইলিয়ান (ব্রাজিল)
ফিফা ফেয়ার প্লে ট্রফি : পর্তুগাল
ব্রাজিলের ষষ্ঠ শিরোপা জয়ে তাদের ফুটসাল ইতিহাসে অমর করে তুলেছে। পাশাপাশি, এই টুর্নামেন্টের সাফল্য দেখিয়েছে যে ফুটসালের প্রতি বিশ্বজুড়ে আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা এই খেলাটির ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে।
মন্তব্য করুন